
বিশেষ প্রতিনিধি :
কিংবদন্তিতুল্য কমিউনিস্ট নেতা অমল সেনের জন্ম শতবার্ষিকী ১৯ জুলাই। ১৯১৪ সালের এই দিনে তিনি নড়াইলে মামাবাড়ি জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন যশোরের বসুন্দিয়ার আফরার জমিদার পরিবারের সন্তান। ম্যাট্রিক ও আইএ-তে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এই মেধাবী ছাত্র। যৌবনে তিনি প্রথমে গোপন বিপ্লবী দলে; পরে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন।
পরিবারের ইচ্ছা ছিল, তিনি জার্মানি গিয়ে ইনজিনিয়ার হবেন। তা না করে তিনি খুলনার বিএল কলেজে গণিতে সম্মান ডিগ্রি নিতে ভর্তি হন। রাজনৈতিক কারণে তিনি “লাঙল যার জমি তার”- এই স্লোগান ধারণ করে পরিবার ত্যাগ করে কৃষকদের ডেরায় গিয়ে আশ্রয় নেন। বাকড়ি গ্রামের প্রান্তিক কৃষক রসিকলাল ঘোষের বাড়ি ছিল তার দীর্ঘকালের আশ্রয়।
১৯৩৬ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যপদ লাভ করেন। ঐতিহাসিক তে-ভাগা আন্দোলনের তিনি ছিলেন তদানীন্তন যশোর-নড়াইল অঞ্চলের নেতা। কৃষক আন্দোলনতো বটেই, এ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে তিনি ভারতে যাননি, বরং জন্মভূমিতে থেকে পাকিস্তান আমলের প্রায় পুরোটা (১৯ বছর) জেল খেটেছেন ।
১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে জনতা তাকে যশোর জেলখানা ভেঙে বের করে আনেন। ১৯৬৭ সালে কমিউনিস্ট পার্টি চীনপন্থী ও রুশপন্থী-এ দু’ভাগে বিভক্ত হলে তিনি পিকিংপন্থীদের পক্ষে থাকেন। তবে আসন্ন মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে দলের সঙ্গে একমত হতে না পারার কারণে তিনি দল থেকে অব্যাহতি নেন ১৯৭০ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর যশোর জেলা কমিটির সভায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অমল সেন ভারতে যান এবং বামপন্থীদের সংগঠন “পূর্ববাংলার মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি” গঠনে ভূমিকা রাখেন।
দেশ স্বাধীন হলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া চীনপন্থী গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি ভূমিকা নেন। শেষ জীবনে তিনি ঐক্যবদ্ধ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অমল সেন পার্টিতে বাম ও ডান বিচ্যুতির বিরুদ্ধে জীবনভর নিরলস সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন সুলেখক। কমিউনিস্ট রাজনীতির ওপরে তার অনেকগুলো বই আছে।
অমল সেন ছিলেন অকৃতদার। ছিলেন নিরহংকার, প্রচারবিমুখ, অতি সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত, পার্টি শৃংখলা ও আদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত এক কমিউনিস্ট নেতা।
২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি খেটেখাওয়া মানুষের এই অকৃত্রিম বন্ধু পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী বাকড়ী গ্রামে তারই প্রতিষ্ঠিত হাই স্কুলের পাশে সমাহিত করা হয় চিরবিপ্লবী অমল সেনকে।