বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর কবির কর্তৃক ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিক মাহমুদা খানমসহ একাধিক সহকারী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরা প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মহা-পরিচালক ও সচিবের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় সহকারী পরিচালককে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মহা-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ, প্রত্যক্ষদর্শী, সাধারণ শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, উজিরপুর উপজেলার বামরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০১ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা খানম জানান, তিনি প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীরের যোগদানের পূর্ব থেকেই ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৫ সালে তার স্বামী মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার কিছিুদিন যেতে না যেতে প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর কবির তাকে বিভিন্ন সময় কু-প্রস্থাব দিয়ে আসছিল। জাহাঙ্গীরের কু-প্রস্তাবে সে রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে বিভিন্নভাবে মানষিক নির্যাতন শুরু করে। এমনকি স্কুল ছুটির পরেও নানা অজুহাত দেখিয়ে তাকে স্কুলে বসিয়ে রেখে যৌন নিপিড়ন করতেন। হয়রানী আর নির্যাতনের শেষ পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১ জুলাই প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মহা-পরিচালক বরাবার মাহমুদা লিখিত অভিযোগে করেন। তার দেয়া অভিযোগে মতে, জাহাঙ্গীর কবির তার সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ সৃষ্টি করে। ২০০৭ সালে ডিসেম্বর মাসে একদিন স্কুল ছুটির পরে জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে কথা শোনার জন্য স্কুলে থাকতে বলেন। ওই বিকেলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর তার সম্ভ্রম লুটে নেয়। মান সম্মানের ভয়ে বিষয়টি তিনি গোপন রাখেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত মাহমুদা প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীরের যৌন নির্গহের শিকার হয়ে আসছেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সোবাহান রাড়ী জানান, বিষয়টি তিনি জানার পর প্রধান শিক্ষককে নিষেধ করলে উল্টো প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর তাকে হুমকি দেয়। পরে তিনি গত ৩ জুলাই উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির তার ধমৃ বোনের মেয়ে জামাতা প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন আহম্মে কে দিয়ে মাহমুদাসহ সহকারী শিক্ষিকাদের চাকুরীচ্যুত করার ভয় দেখিয়ে যৌন হয়রানী করে আসছে। তার যৌন হয়রানীর শিকার হওয়া একাদিক শিক্ষিকারা মান ইজ্জতের ভয়ে বিষয়টি চেপে যেয়ে গোপনে অন্যত্র বদলী হয়ে গেছেন। এছাড়া যুগ্ম সচিবের দাপট দেখিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দূর্নীতিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে এনে উজিরপুর উপজেলার ১০জন শিক্ষক গত ৩ জুলাই প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও একটি মহল বিশেষের ষড়যন্ত্র। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহা-পরিচালক গত ২০ আগষ্ট প্রাথমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি) মো. রকিবউদ্দিনকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত ৪ সেপ্টম্বর সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করেন তিনি। তদন্ত কমিটির আহবায়ক রকিব উদ্দিনের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে কোন মন্তব্য করা যাবে না। তবে খুব শীঘ্রই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।