আজ ৬ ডিসেম্বর দেবহাটা মুক্ত দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত


391 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
আজ ৬ ডিসেম্বর দেবহাটা মুক্ত দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
ডিসেম্বর ৬, ২০১৫ দেবহাটা ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

আর.কে.বাপ্পা, দেবহাটা :
আজ ঐতিহাসিক ৬ ডিসেম্বর, দেবহাটা মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা এই দিনে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিলো, উড়েছিলো বিজয়ের পতাকা। এই দিনে দেবহাটার মানুষ খুজে পেয়েছিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধ বিজয়ের আনন্দ।

মুক্তিযুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক দিনগুলোর বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, সমগ্র দেবহাটা ছিল ৯ নং সেক্টরের অর্ন্তভুক্ত। এই ৯ নং সেক্টরের আওতায় ৩ টি সাব-সেক্টর গঠন করা হয়। তার মধ্যে প্রথম সেক্টরটি ছিল শমসের নগর। যার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা।

দ্বিতীয়টি হেঙ্গলগজ্ঞ ও তৃতীয়টি ছিল টাকী। যার নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার। বাংলাদেশের ১১ টি সেক্টরের মধ্যে ৯ নং সেক্টরটি ছিল সর্ববৃহৎ। ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারের উদ্যোগেই ভারতের টাকীতে গড়ে তোলা হয় ৯ নং সেক্টর। সেজন্য তাকে ৯ নং সেক্টরের প্রতিষ্টাতা ও সাব সেক্টর কমান্ডারের খেতাব দেয়া হয়। সমগ্র দেবহাটা থানা ৯ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল।

শাহজাহান মাষ্টারের নেতৃত্বেই এই অঞ্চলের যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তিনি দেশ মাতৃকার টানে এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের প্রেরনা যুগিয়েছিলেন। তখন দেবহাটা এলাকার খানজিয়া ক্যাম্প, দেবহাটা ক্যাম্প, টাউনশ্রীপুর ক্যাম্প, সখিপুর ক্যাম্প, পারুলিয়া ক্যাম্প, কুলিয়া বাজার ও পুষ্পকাটি ইটের ভাটা সহ বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনারা ঘাঁটি গড়ে তোলে।

দেবহাটা এলাকায় টাউনশ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর এক রাজাকার পাক সেনাদের কাছে পৌছে দেয়। ফলে পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। বিষয়টি ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টার বুঝতে পেরে অসীম সাহসের সাথে যুদ্ধ করেন।
প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্থ হয়। এই যুদ্ধে বহু পাক সেনা নিহত হয়। এছাড়া ভাতশালা যুদ্ধের শেষের দিকে হঠাৎ একটি বুলেট এসে মুক্তিযোদ্ধা গোলজারের মাথায় লাগে। সেখানেই তিনি নিহত হন। একপর্যায়ে টাউনশ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়।
এখান থেকে পাক সেনারা যাওয়ার সময় শাহজাহান মাষ্টারের বাড়ি কেরোসিন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এরপরে অক্টোবর মাসে খান সেনারা খাঁনজিয়া ক্যাম্প ছেড়ে পলায়ন করে। তারা যাওয়ার সময় ঐ এলাকায় এ.পি মাইন পুতে রেখে যায়। ঐ মাইনগুলো অপসারন করতে যেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব শহীদ হন। পরে পারুলিয়া, সখিপুর ও কুলিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্থ হয়। তারা চলে যাওয়ার সময় বহু মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং পারুলিয়া ব্রীজ ধ্বংস করে দেয়। এভাবে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয় ও ওঠে বিজয়ের পতাকা।

সেই দিনটিকে স্মরন করে দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। সেই দিনটিকে স্মরন করে দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলা সদরে একটি র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

র‌্যালিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে। পরে দেবহাটা ফুটবল মাঠ ষ্টেজে আলোচনা  সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব আব্দুল গনি।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল মাবুদ গাজী, উপজেলা সহকারী কমান্ডার শিক্ষক ইয়াছিন আলী, উপজেলা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার আব্দুল হামিদ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নাজমুস সাহাদাৎ নফর বিম্বাস, উপজেলা দপ্তর কমান্ডার আব্দুর রউফ, দেবহাটা সদর ইউনিয়ন কমান্ডার ইদ্রিস আলী, উপজেলা প্রচার সহকারী কমান্ডার শেখ গোলাম হোসেন, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন কমান্ডার শান্তিরঞ্জন কুমার প্রমুখ।

বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনটির স্মৃতিচারন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজাকারমুক্ত একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।