
শ্যামনগর প্রতিনিধি :
আম্ফান আমাগো সর্বশান্ত করে গেছে। ঘরবাড়ি ভাসিয়ে পথে বসিয়ে দেছে। ঝড় আর বানের তোড়ে বসত ঘরের কিচ্ছু আর অবশিষ্ট নি। জমানো টাকা না থাকায় নতুন করে ঘর বান্ধা ছেলো দুঃস্বপ্ন।
তবে আল খায়ের ফাউন্ডেশনের ও সমকাল সহৃদ সমাবেশ যৌথ উদ্যোগে দেয়া টিন ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখালো। এমনভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের পর নেবুনিয়া গ্রামের বৃদ্ধা লাইলা বিবি জানায়, করোনা আর আম্ফান ঈদের কথা ভুলিয়ে দেলো। তবে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় এসব উপহার পেয়ে সেই ঈদের কথা-ই মনে পড়তেছে।
টিনগুলো অনেক মজবুত হওয়ায় অনায়াসে ষাট সত্ত্বর বছর যাবে- উল্লেখ করে একই গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল মাজেদ জানায়, বছর বছর বাঁধ না ভাঙলি নাতি পুতি পর্যন্ত এ ঘরে বাস করে যাতি পারবে। ভাঙনের পর থেকে আশ্রয়হীন হলেও নুতন টিন দিয়ে ঘর বেঁধে আবারও বসত ভিটেতে ফেরার সুযোগ হয়েছে- দাবি তার।
তবে শুধু লাইলা আর আব্দুল মাজেদ না। বরং আল খায়ের ফাউন্ডেশন আর সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এর দেয়া ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে রীতিমত আপ্লুত আম্ফান বিধ্বস্থ উপকূলবর্তী শ্যামনগরের একশ পরিবার।

ঘর বাধার জন্য টিনের পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রী পেয়ে যারপর নাই খুশি সুবিধাভোগী এসব পরিবারের নানা বয়সী সদস্য। আম্ফান আঘাতের পর থেকে সরকারের তরফ থেকে দেয়া খাদ্য সামগ্রী খেয়ে কোন রকমে দিন পার করছে বলে জানায় তারা। টিনের সাথে দেয়া চাল, ডাল, চিড়া, গুড়, বিস্কুট আর মুড়ি, চিনি ঈদের দিনটা অন্তত খুশিতে খুশিতে পার করে দেবে বলেও দাবি তাদের।
দাতিনাখালী গ্রামের বাধ বিধবা জহুরা বেগম বলেন, বুধবার রাতে বান ডাকার পর জীবনের মায়া ছেড়ে দেলাম। টানা তিন দিন ভিটেমাটি ছেড়ে রাস্তা আর সাইক্লোন শেল্টারে কাটাচ্ছি। তোমাগো টিন পেয়ে বসত ভিটেতে ফেরার মন চাচ্ছে। তবে তোমরা যদি সরকারের বলে বাঁধটা বেধে দেও, তবে ত্রাণ পাওয়ার চেয়ে বেশী খুশি হতাম বলেই অঝোঁরে কাঁদতে শুরু করেন ষাটোর্ধ্ব ঐ বাঘ বিধবা।
পাশে দাড়ানো পুর্ব দুর্গাবাটি গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, আম্ফানের পর এত তাড়াতাড়ি ঘর বানতি পারবো কল্পনা করিনি। আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এর উপহার আমাগো কষ্ট কিছুটা কমিয়ে দেছে।
বুড়িগোয়ালীনি গ্রামের বৃদ্ধ রবিন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, দুর্যোগের সময় অনেক ধরনের সাহায্য সরকার, মানুষ আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেয়। তবে বসত ঘর হারানোর পর আবারও ঘর বাধার জন্য টিন পেয়ে আমরা খুব খুশি। দ্রুত ঘরের কাজ ধরবেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, টিনের সাথে পাওয়া খাদ্য সামগ্রী দিয়ে পরিবারের কয়েক দিনের খাবার সংকটও কেটে যাবে। আর আম্পান আতংকে আড়ষ্টতায় ভুগতে থাকা শিশুরা বিস্কুট চিড়া গুড় পেয়ে অন্তত স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ পাবে।
এমন উচ্ছ্বাস আর খুশিভরা প্রতিক্রিয়া রবিন্দ্রনাথ, জহুরা কিংবা হামিদা বেগমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং আল খায়ের ফাউন্ডেশ,ন ও দৈনিক সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এর ত্রাণ সহায়তা পাওয়া প্রতিটি পরিবারের মধ্যে ছিল চরম দুঃসময়ের মধ্যেও তৃপ্ত হওয়ার বন্দনা।
উল্লেখ্য আল খায়ের ফাউন্ডেশন এবং দৈনিক সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এর যৌথ উদ্যোগে সুপার সাইক্লোন আম্ফান’র আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার একশ পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেয়া হয়েছে। শনিবার বেলা এগারটায় বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করে ঘর নির্মানের জন্য ঢেউ টিনের পাশাপাশি চাল, ডাল আর চিড়া মুড়িসহ বিভিন্ন প্রকারের শুকনা খাবার তুলে দেয়া দেয়া হয়। আল খায়ের ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কাট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদের সভাপতিত্বে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি সহকারী কশিনার (ভূমি) আব্দুল হাই সিদ্দিকী।
উদ্বোধনকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মিনা হাবিবুর রহমান বলেন, দলের লাঠি একের বোঝা। আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও সমকাল এর মহতী উদ্যোগ বানভাসী মানুষগুলোকে চরম দুঃসময়ের মাঝে একটু হলেও খুশি করতে পেরেছে।

বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, আম্ফান আঘাতের রাতের পর থেকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাসরত কিছু পরিবার এসব উপহার সামগ্রী পেয়ে অন্তত নুতন করে শুরু করার স্বপ্ন দেখবে।
ত্রাণ বিতরন কার্যক্রম উদ্বোধনকালে আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, সমকাল ও আল খায়ের ফাউন্ডেশন দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে দুর্যোগ কবলিত মানুষের পাশে দাড়াতে হয়। মানুষ মানুষের জন্য প্রবাদের স্বার্থক সমন্বয় ঘটিয়ে তারা প্রমান করেছে ইচ্ছামক্তিই মুল। মাত্র তিন দিনের মধ্যে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সুন্দরবন তীরবর্তী উপকূলীয় জনপদ শ্যামনগরের দুর্গতদের পাশে দাড়ানোই তিনি সমকাল ও আল খায়ের ফাউন্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকাল এর সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি এম কামরুজ্জামান, শ্যামনগর সংবাদদাতা সামিউল মনির, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের প্রানেল চেয়ারম্যান আব্দুল রউফ, সিডিইও ইয়ুথ টিমের পরিচালন ইমরান হোসেন, ইউপি সদস্য আবেদুর রহমান, সংবাদকর্মী বিলাল হোসেন, আব্দুল হালিম প্রমুখ।
#