
অনলাইন ডেস্ক ::
সংবাদ সম্মেলনে ভীষণ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। নির্বাচনী টেনশনের লেশমাত্র ছিল না তার চেহারায়। তাকে দেখে ঘুণাক্ষরেও বোঝার উপায় নেই যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী তিনি। সম্ভবত দেশের মাটিতে এটা তার শেষ সিরিজও। তার পরও কোনো আবেগ ছুঁতে পারেনি তাকে। চার ওপেনারের মধ্যে কয়জনকে একাদশে দেখা যাবে- প্রশ্নটি শুনে তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার অবস্থা তার। অধিনায়কের মতো পুরো দলও ভীষণ চনমনে। গা গরম শেষে সবাই ইনডোরের নেটে চলে গেলেও দলের দুই প্রধান তারকা সাকিব ও তামিম ছিলেন মিরপুর স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটে। দু’জনই ছয় মারার অনুশীলন করছিলেন। ভাবখানা এমন, ছক্কার মতোই যেন উড়িয়ে দেবেন ক্যারিবীয়দের। এমন উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস নিয়ে উইন্ডিজের বিপক্ষে আজ ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ।
একটি বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে এর চেয়ে ভালো অবস্থায় বাংলাদেশ দল খুব কমই ছিল। টেস্টে হোয়াইওয়াশের টাটকা স্মৃতি, চোট কাটিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে স্কোয়াডে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন আরও তিন ওপেনার। সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ। গত আগস্টে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও সিরিজ জিতে এসেছে।
বোলাররাও সবাই সুস্থ ও ফর্মে আছেন। সবকিছু মিলিয়ে দারুণ চেহারায় টাইগাররা। চলতি বছরও দারুণ কেটেছে বাংলাদেশের। এখন শেষটা রাঙানোর প্রচেষ্টায় মরিয়া মাশরাফি, ‘স্রেফ দুটি ফাইনাল (জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় ও এশিয়া কাপ) বাদ দিলে বছরটা আমাদের বেশ ভালো কেটেছে। এখন ভালোভাবে শেষ করতে পারলে অবশ্যই খুব ভালো হবে। বিশেষ করে সামনের বছর শুরু থেকে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তাই জয় দিয়ে শেষ করতে পারলে চমৎকার একটা অবস্থায় থাকব আমরা।’
বাংলাদেশের ঠিক বিপরীত অবস্থা উইন্ডিজের। টেস্টে হোয়াইটওয়াশের আগে ভারতেও সিরিজ হেরে এসেছে তারা। যদিও ওয়ানডে সিরিজে ভালো লড়াই করেছিল। সে লড়াইকে প্রেরণা হিসেবে দেখছেন নতুন ক্যারিবীয় ওয়ানডে অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিতি না। তাই ছেলেরা সবাই মরিয়া হয়ে আছে। আর এর চেয়ে ভালো সুযোগ কমই আসবে। ভারতে হয়তো প্রত্যাশামতো ফল আসেনি, তবে চমৎকার ক্রিকেটে খেলে এসেছি আমরা।
এখানে সিরিজ জিততে পারলে বিশ্বকাপের আগে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।’ তবে কাজটা যে সহজ হবে না সেটা বেশ ভালোমতোই বোঝেন পাওয়েল, ‘ভীষণ চ্যালেঞ্জিং একটা সিরিজ হবে। ঘরের মাঠে যে কোনো দলকে হারানোই বেশ কঠিন। আর বাংলাদেশ তো দারুণ দল। ক্যারিবিয়ানে তারা আমাদের হারিয়ে এসেছে। আমরাও তেমন কিছু করতে চাই।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির ভয় ক্যারিবীয়দের দানবীয় ব্যাটিংকে, ‘শারীরিক শক্তিতে তারা অনেক এগিয়ে। এ ধরনের ফরম্যাটে এমন দু-একজন কিন্তু ম্যাচের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। ফরম্যাট যত ছোট, তারা তত ভয়ঙ্কর। তাদের এমন কয়েকজন আছে, যারা একা প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। তাদের এ বিষয়টির ওপর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।’
ক্যারিবীয়দের জন্য চ্যালেঞ্জের কারণ হলো, পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামবে টাইগাররা। সাকিব টেস্ট দিয়ে ফিরেছেন, আড়াই মাস পর খেলতে নেমে তামিম প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। তার সঙ্গী কে হবেন, সেটা নিয়ে মধুর এক সমস্যায় রয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। এ দৌড়ে এগিয়ে আছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই সেঞ্চুরিতে ৩৪৯ রান করা ইমরুল কায়েস। চমৎকার ফর্মে আছেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, আজ তামিমের সঙ্গী হিসেবে লিটনকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পরিস্থিতি বুঝে সৌম্যকে তিনে খেলানো হতে পারে। ইমরুল কায়েসকেও একাদশে দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এশিয়া কাপের মতো সাতে ব্যাটিং করতে পারেন তিনি। এ ছাড়া সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তো আছেনই। ঢাকা টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করা অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের খেলাও নিশ্চিত। অধিনায়ক মাশরাফি জানিয়েছেন, টেস্টে কোনো পেসার না খেললেও আজ তিন পেসারের মাঠে নামাটা নিশ্চিত। তার নেতৃত্বে মুস্তাফিজ ও রুবেলকে দেখা যাবে একাদশে। ওয়েস্ট ইন্ডিজও প্রায় পূর্ণ শক্তিই নিয়েই নামবে। নিয়মিত অধিনায়ক জেসন হোল্ডার না থাকায় লোয়ার অর্ডারে দেখা যাবে কার্লোস ব্রাথওয়েটকে। দুই বছর পর ড্যারেন ব্রাভো ফেরায় তাদের ব্যাটিং শক্তিও বেড়েছে অনেকটা।
মারলন স্যামুয়েলস, শাই হোপ ও শিমরন হেটমেয়ারের সমন্বয়ে গড়া ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং যে কোনো দলের জন্যই হুমকি। লেগস্পিনে বাংলাদেশিদের দুর্বলতার কারণে দেবেন্দ্র বিশুকেও দেখা যেতে পারে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে মিরপুরের কন্ডিশন। স্পিনবান্ধব হলেও শেরেবাংলার উইকেট প্রায়ই রহস্যময় হয়ে ওঠে। শীতের শুরুর এই সময়ে শিশিরের কারণে সেটা আরও ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হয়ে উঠতে পারে। শুধু শিশির পড়ার বিষয়ে ধারণা নেওয়ার জন্য গতকাল সন্ধ্যার পরও বেশ কিছু সময় অনুশীলন করেন মাশরাফি-সাকিবরা। এ শিশিরের কথা চিন্তা করেই পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন মাশরাফি, ‘শিশির কতটা প্রভাব ফেলবে সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বছরের এ সময়টাতে দিবারাত্রির ম্যাচে শিশিরের ওপর নির্ভর করে স্পিনাররা কতটুকু সহায়তা পাবেন। গত বছর অবশ্য এ সময় খুব বেশি শিশির পড়েনি। দেখা যাক কী হয়। এমনিতে আমি টসে জিতে আগে ব্যাটিং করে ফেলার পক্ষে। তবে আমরা আগে ব্যাটিং করলে কামনা করব যেন কম শিশির পড়ে। আর পরে ব্যাটিং করলে চাইব যেন বেশি শিশির পড়ে।’ মাশরাফির এই চাওয়াটা মেলার ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু।