
অনলাইন ডেস্ক ::
উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে আগামী দিনে বাংলাদেশ আরও উন্নত-সমৃদ্ধ হবে—এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে পঁচাত্তরের পর আর মাত্র পাঁচ বছরের মাথায়ই বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারত। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত। আর স্বাধীনতার ১০ বছরের মাথায়ই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হতে পারত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এত দিন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দিকে করুণার চোখে তাকাত, ঋণ নিতে গেলে হাজারটা শর্ত জুড়ে দিত, দুর্নীতি না করলেও দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিত—এখন আর তারা সেটি করতে পারবে না। সে সাহসও তারা পাবে না। কারণ বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। এখন বাংলাদেশের ঋণ নিতেও অসুবিধা হবে না। যদিও সুদ একটু বেশি দিতে হবে, সেটিও বাংলাদেশ দিতে পারবে। আর ঋণ নিয়ে দেশকে আরও উন্নয়নের দিকে অগ্রসর করতে পারব।’
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময় মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় প্রতিটি শর্ত পূরণ করেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল। পৃথিবীর কোনো দেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরে এত বড় অর্জন ঘটেনি। সেখান থেকে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনা না ঘটলে, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে—আরও অনেক আগেই এই অর্জন আমরা করতে পারতাম। এটি অন্তত মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘এই ৩৭ বছরেও আমরা এই অর্জন করতে পারলাম না কেন? পঁচাত্তরের পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে এক কদম এগিয়ে নিতে পারেনি কেন? কারণ পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছে। বিচার বন্ধ করে তাদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী করেছে, ক্ষমতার ভাগিদার করেছে। তারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি। দেশের মানুষ উন্নত হবে, পেটভরে ভাত খেতে পারবে, মাথা গোঁজার ঠাই পাবে, উন্নত শিক্ষা পেয়ে শিক্ষিত হবে—এগুলোও চায়নি। আর চায়নি বলেই দেশের উন্নয়ন করেনি। বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে—এটিই তারা চেয়েছে। দেশের মানুষের নয়, নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনই তারা করেছে।’
পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকদের দুঃশাসন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যাকারী ঘাতক রাজাকার-আলবদর যুদ্ধাপরাধী আর ‘৭৫ এর খুনি—একই বৃন্তের ফুল। তারাই এদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে। তারাই ষড়যন্ত্র করে দেশের অগ্রগতির পথকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে।’
পঁচাত্তর পরবর্তী ছয় বছর বিদেশের মাটিতে শরণার্থীর জীবন কাটানো এবং ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরার পর যখন রাজনীতি শুরু করি, পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তবে দেশের মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি। হয়তো দলের উপরের দিকে একটু টালমাটাল হয়েছে, কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কখনো পথ হারায়নি। বাংলাদেশের মাঠেঘাটে যেখানেই ঘুরেছি, সেখানেই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। মা-বোনেরা ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। এটাই আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে।’
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতার অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার জন্ম হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীনতার পেয়েছি, দেশ পেয়েছি, মর্যাদা পেয়েছি। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ সেই জাতির পিতার জন্মদিনেই আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভের সুখবর পেয়েছি। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না।’
তিনি বলেন, “এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ভিন্ন আকারে হবে। কারণ এই উদযাপন আমরা করবো একটি উন্নয়শীল দেশ হিসেবে। যারা একদিন এই বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলেছিল, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়ে তাদের জবাব আমরা দিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ এখন আর ‘বটমলেস বাস্কেট’ নয়, একটি উন্নয়নশীল দেশ।’
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের লক্ষ্যই ছিল দেশকে উন্নত করতেই হবে। বিএনপি কখনোই দেশের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়নি। তারা পঞ্চবার্ষিকী কোনো পরিকল্পনা নেয়নি, এডহক ভিত্তিতে কাজ করতো। তাতে কোনো ফলও হতো না। তাদের নিজেদের ভাগ্যেরই কেবল পরিবর্তন হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথেও নিয়ে গেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।