
গোপাল কুমার,আশাশুনি ::
আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় খোলপেটুয়া নদীর অব্যহত ভাঙনে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাঁটল দেখা দিয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে বাঁধ ভেঙে যে কোন বড় ধরনের প্লাবনের আশংকা করছেন উপজেলা সদর সহ আরো দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এরমধ্যে সদরের দয়ারঘাট গ্রামের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। শনিবার দুপুরের জোয়ারের পানি চুঁইয়ে ভেতরে ঢুকতে শুরু করলে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নদী ভাঙনে সদরের বিলুপ্তপ্রায় দয়ারঘাট গ্রামের প্রতিবন্ধী পরিতোষ বিশ্বাসের ঘর সংলগ্ন বেড়িবাঁধে নদীর জোয়ারের পানি চুঁইয়ে ভেতরে ঢুকেছে। তার ঘরটি অর্ধেক রাস্তার নীচে পড়ে গেছে। নদীভাঙনে সর্বশান্ত এ প্রতিবন্ধী পরিবারটি অন্যত্র যাওয়ার জায়গা না থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে দিনাতিপাত করছে। দয়ারঘাটের মন্টু মন্ডলের বাড়ি থেকে কাইয়ুমের ঘের পর্যন্ত প্রায় ৮ চেইন বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে কোথাও কোথাও এক থেকে দেড় হাত অবশিষ্ট আছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাঁধটি ধ্বসে অতীতের মত আবারো উপজেলা সদর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা হচ্ছে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীন ওই দিন বিকালে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেন। তিনি বাঁধটি মেরামতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেন।
এছাড়া একই ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া গ্রামের শিবু মন্ডলের দোকান থেকে খোকা মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪’শ হাত বেড়িবাঁধ চরম ক্ষতিগ্রস্ত। খোলপেটুয়া নদীর অব্যহত ভাঙনে বাঁধের অধিকাংশই প্রায় নদীগর্ভে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও মাত্র এক-দেড় হাত অবশিষ্ট আছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে অতীতের মত বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আশাশুনি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববতী শ্রীউলা ও শোভনালী ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান স,ম সেলিম রেজা মিলন বলেন- ক্ষতিগ্রস্ত দুই গ্রামের বেড়িবাঁধের খবর পেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে মেরামত কাজ ধীরগতিতে চলছে। পরবর্তী গোণের আগেই সরকারি বরাদ্দ না পেলে কি হবে বলা যাচ্ছে না।
বর্ষা মৌসমের শুরু থেকেই ঝড় জলোচ্ছাস ও নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে পাউবো’র অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। কিন্তু পাউবো’র ভূমিকা শম্বুক গতির ফলে প্রতিবছর জুন-জুলাইয়ে উপজেলার আশাশুনি (সদর), প্রতাপনগর, শ্রীউলা, খাজরা, আনুলিয়া, বুধহাটা ইউনিয়নের কোন না কোন জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া যেন নিয়তিতে পরিনত হয়েছে। তাছাড়া পাউবো নদী শাসন না করে বার বার পিছিয়ে রিং বাঁধ দিতে দিতে ইউনিয়নের ভৌগলিক পরিবর্তন করে ফেলছেন। নদীভাঙনে শত শত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হচ্ছে। সদরের দয়ারঘাট ও জেলেখালী গ্রাম দুটি এখন শুধু ম্যাপেই আছে, মুল গ্রাম দুটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী শাসন করে আধুনিক নকশায় বাঁধ নির্মান করে বর্ষা মৌসমের আগেই দ্রুত বাঁধ মেরামত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
###