
কৃষ্ণ ব্যানার্জী :
নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা মিলেমিশে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে আশাশুনির গোয়ালডাঙ্গা ফকিরবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিজি প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে যথা সময়ে পরীক্ষা শুরু না করে টাকা এবং জমি নিয়ে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার নিয়োগ বোর্ডেও রাখা হয়েছে চাকুরী প্রদান করা প্রার্থীর চাচাতো ভাইকে। প্রার্থীদের সাথে মিথ্যা বলে নিয়োম নীতির তোয়াক্কা না করে টাকার বিনিময়েই এ নিয়োগ সম্পূর্ণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ অংশ গ্রহণ করতে না পারা প্রার্থীদের।
অন্যান্য প্রার্থীরা জানায়, সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা ফরিরবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি পেয়ে আবেদন করলে ২৭ জন বৈধ প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরমধ্যে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে গত ২২ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়। নিয়োগ পত্রে সময় অনুসারে প্রার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে হাজির হন। কিন্তু ডিজি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারবে না তাই আজ পরীক্ষা হবে না মর্মে জানিয়ে দেয়া হলে অনেক প্রার্থী পরীক্ষা স্থল ত্যাগ করেন। পরবর্তিতে বিকালে ডিজি প্রতিনিধি তার মোননিত একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করলে তখন উপস্থিত মাত্র ৪ জন প্রার্থীকে নিয়ে পরীক্ষা শুরু করা হয়। প্রায় সন্ধার দিকে এ পরীক্ষা নেয়া শেষ হয়। বিষয়টি অন্যান্য প্রার্থীরা জানতে পেরে ঘোষের সৃষ্টি হয়। এসময় তারা উক্ত পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে সকলের অংশগ্রহণে আবারও পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তারা আরও জানান, পূর্বেই ঐ এলাকার মাসুল বিল্লাহ নামে এক প্রার্থীর নিকট থেকে আড়াই বিঘা জমিসহ মোট ১৫ লাখ টাকা নিয়ে অন্য প্রার্থীদের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে না দিয়ে এ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়াও তারা অনেক নিয়োগ বোর্ডের অনেক অনিয়োমে কথা তুলে ধরেন।
উক্ত নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা হলেন- সভাপতি, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান ফকির, সদস্য সচিব, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত সরকার, সদস্য, আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাকি বিল্লাহ, অভিভাবক সদস্য, নিয়োগ কৃত প্রার্থীর চাচাতো ভাই আজহারুল ইসলাম ও ডিজি প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন, কিন্তু তিনি উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তিতে তার বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষককে নিযুক্ত করেন।
এ বিষয়ে ডিজি প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার উপস্থিত থাকার কথা ছিল কিন্তু আমি ব্যস্ত থাকায় উপস্থিত থাকতে না পেরে আমার বিশ্বস্ত একজন শিক্ষককে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা কেন দেরিতে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে আমি উপস্থিত না থাকায় কিছু বলতে পারছি না। আপনি এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার বাকি বিল্লাহ বলেন, ডিজি প্রতিনিধি আসছে আসছে করে একটু দেরি হয়েছে। পরে তিনি আসতে না পেরে তার মনোনিত প্রতিনিধি দিলে পরীক্ষা শুরু করা হয়। যথা সময়ে পরীক্ষা শুরু না করা বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দেরি একটু হয়েছে তবে এতে কোন সমস্যা নাই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বোর্ডের কোন সদস্য নিয়োগ প্রার্থীর আত্মীয় ছিল কিনা তা আমার জানা ছিল না। তবে যদি থাকে সেটি আমার জানার বিষয় না, যারা নিয়োগ বোর্ড গঠন করেছে তাদের জানার বিষয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত সরকার জানান, টাকা পয়সা লেনদেন করা হয়েছে কিনা আমার জানানেই। বিয়ষটি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জানেন। আমি অল্পদিন নিয়োগ পেয়েছি বোঝেন তো।
সার্বিক বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান ফকির বলেন, কিছু দিন আগে আমরা স্কুলের নামে একটি জমি কিনেছি এটা সত্য। কিন্তু সেটি আমার প্রার্থীর কাছ থেকে নেই নি। নিয়োগ বোর্ডে যে সদস্যর কথা বলা হয়েছে, সে তার আপন কেউ না, চাচাতো ভাই, তাই এতে নিয়োগ বোর্ডের কোন সমস্যা হয় না। তাছাড়া গ্রামে সবাই সবার আত্মীয় এটা তো বোঝোনে।
২৭ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছে কেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সবাই কে নিয়োগ পত্র দিয়েছি তারা না আসলে আমাদের কিছু করার নাই। তবে, তিনি দেরিতে পরীক্ষা শুরু করার কথা স্বীকার করেছেন।##