
এস,কে হাসান, বুধহাটা :
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম নৈকাটি। গ্রামের মৃতঃ মুনসি অজিহার মোড়লের পুত্র আঃ রশিদ মোড়ল। প্রানচঞ্চল, হাসিখুশি একজন মানুষ ছিলেন তিনি। সহায়-সম্পদ ও প্রতিপত্তি খুব বেশী না হলেও কম ছিলনা। মানুষের কাছে ছিলেন সম্মানীয়। মানুষটির জীবনে একটি দুর্ঘটনা সবকিছুকে উলোট-পালট করে দিয়ে গেল। ১৯৯০ সালের কথা। তিনি ধান ক্ষেতে পোকা মারতে কীটনাশক নিয়ে ক্ষেতে যান। বীষের বোতলের ছিপি খুলে ব্যারেলে দেওয়ার সময় ছিপি ব্যারেলের মধ্যে পড়ে যায়। ছিপি বের করতে না পেরে বোতলের মুখে কলারপাতা খিলি করে বন্দ করে রাখেন। বীষ দেয়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে পা পিছলে পড়ে গেলে বোতলের মুখ আলগা হয়ে দু’চোখে বীষ পড়ে। তার আর্তনাদে পাশে থাকা মহিউদ্দিন সকলকে ডাকলে সবাই মিলে তার চোখে পানি ঢেলে বিষ বের করার চেষ্টা করে। বিষক্রিয়ায় তিনি প্রায় আধাঘন্টা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিলেন। জ্ঞান ফিরলে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ মত চক্ষু চিকিৎসক ডাঃ হযরত আলির কাছে চিকিৎসা করান হয়। কিছু দিনের মধ্যে চক্ষু ভাল হয়ে যায়।
১৯৯২ সালে তিনি ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। যখন তিনি জনসেবায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, তখন আবার তার উপর অমাবশ্যার আঁধার এসে গ্রাস করতে চাইলো। ১৯৯৬ সালে তার চোখে আবার পুরনো সমস্যা দেখা দিল। তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ১৫ দিনের চিকিৎসায় কোন উপকার না পেয়ে কোলকাতায় নিয়ে প্রখ্যাত চক্ষু চিকিৎসক ডাঃ ডি কে রায় এর কাছে দেখান হলো। কিন্তু না আর কোন উপায় খুঁজে পাওয়া গেলনা। তিনি পুরাপুরি ভাবে অন্ধ হয়ে গেলেন। ফিরে এসে নলতা শরীফের খাদেমের শরণাপন্ন হলেন এবং তার সহযোগিতায় ডাঃ আমিরুল ইসলামের কাছে পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানান গেলো- চক্ষুর শিরাগুলো ভাল আছে, কর্ণিয়া লাগাতে হবে। তিনি রিফার করলের ঢাকা ইসলামি চক্ষু হাসপাতালে। কর্ণিয়া স্থাপনের পর ১০/১২ বছর খুব ভাল ভাবেই কেটে যায়। এরপর শুরু হয় আবার বীভিষিকাময় জীবনের হাতছানি। আস্তে আস্তে তার চক্ষু সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তিনি সম্পূর্ণ ভাবে অন্ধ হয়ে এক কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন। দীর্ঘ চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে তিনি তার সহায় সম্বল সবকিছু শেষ করে ফেলেছেন। বর্তমানে তার সংসার জীবনে চলছে করুন দুরাবস্থা। কারো কাছে হাত পাততে শরম লাগে, আবার সংসার পরিচালনা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অসহায় এই মানুষটির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে একটু শান্তনার বাণী শুনানো এবং সম্ভব হলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে মানুষটির শেষ জীবনের দুর্বিসহ কষ্ট হয়তো একটু লাঘব হতো।