
কৃষ্ণ ব্যানার্জী ::
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার হেতাইলবুনিয়া (কাজলনগর) মুক্তিযোদ্ধের ক্যাম্পটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উক্ত গ্রামের সুধীর চন্দ্র মন্ডল ও অধীর চন্দ্র মন্ডলের দ্বিতল ভবনটি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আশাশুনি থানা সদর থেকে দুরবর্তী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মুক্তিযেদ্ধাদের জন্য ছিল নিরাপদ।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী জানান, ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুক্তিযোদ্ধারা এখানে অবস্থান করত। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং থাকা খাওয়া ও অন্ত্রের ঘাটি হিসাবে ব্যবহৃত হত এ ক্যাম্পটি। মুক্তিযোদ্ধারা সকল ট্রেনিং নিয়ে খান সেনা ও রাজাকারদের সাথে আশাশুনির, কেয়ারগাতি, গোয়ালডাঙ্গা, চাপড়া, খুলনা সোনাডাঙ্গা, সহ বিভিন্ন স্থানে প্রত্যক্ষযুদ্ধে বহু শত্রুসেনাদের হত্যা করে। গোয়ালডাঙ্গা সম্মুখ যুদ্ধ ও কেয়ারগাতি যুদ্ধে রফিকুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, আমিন উদ্দীন আবুল হোসেন, মোজ্জামেল হক শহীদ হয়।
সাবেক আশাশুনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডা আব্দুল হান্নান বলেন, হেতাইলবুনিয়া ক্যাম্পটি পরবর্তীতে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত শহীদ কাজল স্বরণ নামে নাম করণ হয় কাজলনগর নামে। এই ক্যাম্পটি নেতৃত্বদেন মৃত রহমতউল্লা দাদুভাই (বীর প্রতিক), শামছুল আবেদীন (অব: মেজর), শেখ কমরুজ্জামান, সম বাবর আলী, মৃত রফিকুল ইসলাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের আহবানে মুক্তির সংগ্রামে নেমেছিল সকল মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় হেতাইলবুনিয়া গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডল, রঘুনাথ মন্ডল সহ সকলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে ছিল।
মহান যুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য স্মৃতি বিজড়িত এই ক্যাম্পটি। কিন্তু সেটি এখন বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। সংস্কারে অভাবে অস্থায়ী এই ক্যাম্পটি দ্বিতীয় তলার ছাদ ও দেয়ালে ধরেছে ফাটল। বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ও দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জলন্ত দৃষ্টান্ত হেতাইলবুনিয়া (কাজলনগর) মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পটি সংস্কারের দাবী করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বাসীন্দারা।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই ক্যাম্পটিতে জড়িয়ে আছে অনেক জীবন বিপন্নকারী মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক দু:খময়স্মৃতি ইতিকথা, সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের হাসি। কিন্তু বর্তমানে এই অস্থায়ী ক্যাম্পটি অবস্থা খুবই শোচনীয় জরাজীর্ন। ফাটল ধরেছে সকল দেয়ালও ছাদে। যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী স্মৃতির অতলগহবরে হারিয়ে যাওয়া বাড়ীতেটি বর্তমান বসবাসকারীরা ও দাবীকরেন স্মৃতি সংরক্ষণের।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান, আমি কাজলনগর মুক্তিযোদ্ধার ক্যাম্পটি বেহাল দশার কথা শুনে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডা আব্দুল হান্নানকে ক্যাম্পে পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। দ্রুত এর স্মৃতি সংরক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।