
এস কে সিরাজ, শ্যামনগর :
গ্রামীন ঐতিহ্যের সমারহে ভরে থাকা চারপাশের নাম না জানা পরিচিত ঔষাধী গাছগুলো আজ আর নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রামীন জনপদের বুক থেকে এ মহাগাছড়া ঔষাধী গাছগুলো। আয়ুর্বেদী চিকিৎসক শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের জি এম শফিকুল ইসলাম ( সকলের কাছে নানা হিসাবে পরিচিত) দীর্ঘ দিন ধরে মহা ঔষাধী গাছগুলো খুজতেছিলেন।দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি প্রয়োজনীয় ঔষাধী গাছের সন্ধান করতে করতে নাজেহাল হয়ে পড়েছিল। শুক্রবার সকলে প্রিয় নানা শফিকুল ইসলাম কে পেয়ে প্রেসক্লাবে বসে হাত দেখাচ্ছিলাম। হাত দেখে নানা বললেন,তোমার একটি গাছের পাতার রস খেতে হবে। তবে গাছটি পাওয়া খুবই মুসকিল। অনেক দুর থেকে এ গাছের পাতা ম্যানেজ করতে হবে, টাকাও লাগবে। এ কথা শুনার পর বললাম নানা, আমাদের উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও স্যার অনেক ঔষাধী গাছ লাগিয়েছেন, এগ্রো টেকনোলজি পার্কে চলেন যাই।নানা পার্কে যেতে রাজি হয়না। এক পর্য্যায় নানা কে জোর করে নিয়ে গেলাম পার্কে। নানা পার্কের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো মহা ঔষাধী গাছগুলো আর উপরে লাঠিতে ঝুলানো গাছের পরিচিত ছোট সাইনবোর্ড। নানা দেখেই হতভম্ব।
আনন্দ মুখে চিৎকার করে বললেন বহুদিন মনে মনে এ গাছগুলো খুজতেছিলাম।মনের স্বপ্ন আজ পুরন হলো।নানা বললেন আমাকে উদ্দেশ্য করে যদি কেউ আমাকে একলক্ষ টাকা এমনি দিতেন তাহলে তাতে যে উপকার হতো আমার তার চেয়ে বেশী উপকার করেছো তুমি আমাকে এখানে ধরে এনে। আমি সত্যি খুবই আনন্দিত। আমার স্বপ্ন বাস্তবে সত্যিহলো। আমি কখনও এতগুলো মহা ঔষাধী গাছ এক সাথে কোন দিন দেখিনি। দীর্ঘদিন ধরে গাছ নিয়ে কাজ করছি সত্যি কিন্ত বাড়ীর আঙ্গিনায় এভাবে কল্পনার স্বপ্ন সত্যি হবে আমি কোন দিন বুঝতে পারিনি। কল্পনাতীত কাজের জন্য তিনি নিজের মত করে নিজের ভাষায় বললেন ইউএনও স্যার আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, স্যার একটি মহৎ কাজ করেছেন,সারাজীবন স্যারের কথা মনে রাখবো। নানার মুখে যেন যৌবনের হাসি।
সত্যিই নানার এ অবস্থা দেখে আমিই খুশি হয়েছিলাম। এক সাথে থাকতে থাকতে নানার কাছে কয়েকবার মোবাইলে রিং আসছিল। নানা মোবাইল রিসিফ না করে বারবার বলতেছিলেন আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো। এভাবে একাধিক ফোন কল কেটে দিলেন তিনি। মহা ঔষাধী বাগানে নানা তার প্রিয় গাছগুলোর গায়ে হাত বুলাচ্ছিলেন আর এ গাছগুলোর ঔষাধী ক্ষমতা সম্পর্কে আমাকে ধারনা দিচ্ছিলেন। এভাবে নানা একটি করে গাছের গায়ে হাত দিয়ে তার গুনাবলী ব্যাখ্যা করেন।
দেখাযাক নানা কোন গাছ নিয়ে কি- বললেন, কালমেঘ -( লিভারের কাজ করে), মনিরাজ-( সর্প দংশনের উপর কাজ করে), পাথরকুচি-( চুলাকানা রোগে কাজ করে, শরীরে পাথর দেখা দিলে এর রস তার ধংস্ব করে) , মিছির পাতা- ( দাতের রোগ নিরাময় করে) , তুলসী – তুলোটেপরী- ( এর শিকড় রক্ত শুন্যতা দুর করে ও বাচ্ছাদের মধুর সাথে এর পাতার রস খাওয়ালে সর্দ্দি কাশি নিরাময় করে), আমরুল-( সর্দ্দি কড়া হলে খেলে উপকার হয়), কাটানিটে- ( বহুগুনে খ্যত), পাহাড়ী ধনে-( ল্যান্স ক্ষত বিনষ্ট করে), হেলান্ঞ – ( রক্ত পরিস্কার বা মেয়েদের প্রদহ রোগে কাজ করে), আদাবরন-( আমাশয় রোগের নিরাময়ক), থানকুঁড়ি – ( আমাশয় রোগ নিধন করে) , ধৃত কুমারী – মানুষের পুন্য যৌবন ফিরিয়ে দেয়), ধৃতরাজ- ( স্বপ্নদোষে কাজ করে) , বামনআটি- ( সর্দ্দি কাশির কাজ করে) , কুকসীড-( বাসকের কাজ করে), লজ্বাবতী -( এর শিকড় কাছে থাকলে কোন গুন টটকা, যাদু কাজে আসেনা), বনমুল বা বনমুলা – গরু ছাগলের দুধ কম হলে, এটা খাওয়ালে কাজ হয়), পাশাফুল -( এর অনন্তমুল কাছে থাকলে টটকা কাজে আসেনা) , শীষ আকন্দ-( এর শিকড় দাত পরিস্কার ও ভাল রাখে), বড়চাদর – ( লিভারে কাজ করে), লালকেউটে – স্বর্প জনিত রোগে কাজ করে), স্বেত আনন্দ – ( প্রদহ রোগে কাজ করে), সাতমুল -( যৌন রোগ থেকে মুক্ত রাগে), নিমুখো – ( হাড়ভাঙ্গা জনিত কাজ করে), গীমে শাক – ( বাতজনিত রোগের কাজ করে), এছাড়া প্রায় শতাধিক মহা ঔষাধী গাছ সংরক্ষিত রয়েছে সেখানে।
সরেজমিন টেকনোলজি পার্কে এসে বাস্তবে দেখার অনুরোধ রহিল। শ্যামনগরের একাধিক দৃশ্যমান কাজের রপকার উপজেলার অভিভাবক সৃজনশীল ইউএনও আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম এর নিজস্ব চিন্তা চেতনায় ও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এস এম মহসীন উল মুলক, ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জাফর রানাসহ সকল জনপ্রতিনিধি, সচেতন মহলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় শ্যামনগরের এগ্রো টেকনোলজি পার্কটি দেশ জুড়ে সাড়া জাগিয়েছে।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ পার্ক পরিদর্শনে শতশত দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে থাকে। এ পার্কে ঔষাধী গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন শাক সবজী, ফলমুলসহ সকল প্রকার গাছে সন্ধান পাবেন, এখানে। এছাড়া পরিকল্পিত ভাবে অল্প জায়গায় কি ভাবে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় এ শাক সবজির গাছ লাগিয়ে নিজের প্রয়োজন মেটাবেন তারও বাস্তবভিত্তিক হাতে কলমে জেনে নেয়ার ব্যবস্থাও আছে।