কামরুজ্জামান মোড়ল,পাটকেলঘাটা:
সাতক্ষীরা জেলা সহ খুলনা বিভাগের কয়েক হাজার ইট ভাটায় সরকারী নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে ফলজ ও বনজ কাঠ পোড়ানোর মহোৎসবে মেতে উঠেছে।
আর এ জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ভাটা মালিক সমিতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কাঠ পোড়ানোর দুঃসাহস যোগাচ্ছে। রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় ঠিক সেই মুহুর্তে বিগত কয়েক বছর ধরে খুলনা বিভাগের পাইকগাছা উপজেলার এডিবি ব্রিকস নামে একটি ভাটা ফিট চিমনি নয়, টিনের ব্যারেলের চিমনি ব্যবহার করে ইট পুড়িয়ে যাচ্ছে।
আর এই ইট পোড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ। পাশেই মান্নানের ভাটায় হাওয়া ভাটা থাকলেও পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। যার ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব আর ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র সহ পরিবেশ।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণে কালীগঞ্জে নিউ পাইলট ব্রিকস, নিই এন.বি ব্রিকস, সোনালী ব্রিকস, দেবহাটা, রোমানা ব্রিকস কুলিয়া, জাহিদ ব্রিকস, এম আর ব্রিকস, আশাশুনী, শ্যামনগরে আশা ব্রিকস, জামান ট্রেডার্স, গাজী ব্রিকস, পূর্বে বিনেরপোতায় এবি ব্রিকস, খোদেজা ব্রিকস, কামরান ব্রিকস, এম আর বি ব্রিকস মালিক সাতক্ষীরা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, তালার পাটকেলঘাটা কুমিরার নূর ব্রিকস, ইসলামকাটি রানী ব্রিকস, উত্তরে নিট ব্রিকস ঝাউডাঙ্গা, কদমতলা, লাবসা মোড়, কলারোয়ায় হোসেন ব্রিকস-১,২, এন.বি ব্রিকস, ভাই ভাই ব্রিকস বামনখালী সহ সাতক্ষীরার ২ শতাধিক ভাটা ঘুরে দেখা গেছে কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছে পরিবেশ ক্ষেকোরা। সেই সাথে যশোর জেলার কেশবপুর, মনিরামপুর, রাজগঞ্জ, অভয়নগর, নওয়াপাড়া, খুলনা জেলার চুকনগর, ডুমুরিয়া। নামেমাত্র কয়লা স্তুপ করে রাখলেও ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ।
এদিকে খুলনা জেলার দক্ষিণে পাইকগাছা উপজেলায় সব ভাটায়ই পোড়ানো হচ্ছে ফলজ ও বনজ কাঠ। তাদের খুঁটির এতটাই জোর যে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে টিনের চিমনি ব্যবহার করে পাইকগাছা-কয়রা সড়কের চাঁদখালি পরিষদ সংলগ্ন ভাটায় পোড়ানে হচ্ছে ইট। যার কোন অনুমোদনই নেই। এর তথ্য উদঘাটনে সরেজমিনে গেলে ভাটার মালিক ও ম্যানেজার পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফিরে আসলেও মালিক বলে, সাংবাদিকদের এমন লেখা ও ছবিতে তাদের কিছুই হবে না। কাঠ পোড়ানোর জন্য ঐ এলাকার এমপি নুরুল হক নাকি তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন। অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলার বিনেরপোতা সংলগ্ন বেতনা নদীর দুধারে ১১টি ভাটায় নামেমাত্র কয়লা রেখে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পরিবেশ বান্ধব ভাটা তৈরী করলেও সেখানে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট ফলজ ও বনজ কাঠের সাথে পাল্লা দিয়ে পোড়াচ্ছে তুষ কাঠ যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যে কারণে ভাটা সংলগ্ন ৩ কিঃমিঃ এর মধ্যে অসংখ্য ঘরবাড়ি থাকলেও সেখানে ভাটা হওয়ায় ঐ এলাকাবাসী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচেছ। কাঠ পোড়ানোর ফলে ভাটার চিমনির কালো ধোয়া থেকে বের হচ্ছে মাত্রারিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যার ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে দারুণভাবে। এর প্রভাবে একদিকে যেমন কৃষির ক্ষতিসাধন হচ্ছে অপরদিকে মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছে জটিল ও কঠিন রোগ। বর্তমান সরকার অত্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ এ দেশকে রক্ষার জন্য পরিবেশের উপর নানাবিধ ভূমিকা গ্রহণ করলেও তার একটুও কর্ণপাত করছে না ভাটা মালিক সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অবৈধ অর্থের কাছে দায়িত্ব বিকিয়ে দিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। রক্ষকের স্থানে ভক্ষক হয়ে কার্যকারিতা না দেখিয়ে ঠুটু জগন্নাথের ভূমিকায়। খুলনা বিভাগের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দূর্যোগ প্রতিরোধে পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ভাটা মালিকদের ভাটা পরিচালনা করতে হবে। সরকারের আইন অনুযায়ী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ভাটাও পরিচালিত হয় না। সেকারণে প্রত্যেকটি ভাটায় আইনের আওতায় এনে পরিবেশ বান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির উদ্দীন এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, টিনের চিমনি ও ফলজ ও বনজ কাঠ পোড়ানো হয় বিভিন্ন ভাটায়।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিজাউল ইসলাম জানিয়েছেন, কয়লার দাম কম, তারপরেও কেন কাঠ পোড়াচ্ছে তার বোধগম্য নয়। কাঠ পোড়ালে লাভ তো দূরের কথা ক্ষতি হবে। অপরদিকে বিনেরপোতার এক ভাটার মালিক জানিয়েছেন, কাঠ পোড়ানোর জন্য ভাটা মালিক সমিতিতে সম্প্রতি ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। যে কারণে তারা কাঠ পোড়াচ্ছেন।