
ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম ডেস্ক :
গত মে মাসে যেসব বাংলাদেশিকে ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে ১৪৭ জনকে ফেরৎ পাঠিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। তবে ফেরৎ যাওয়া বাংলাদেশিদের অবস্থা জানতে উদগ্রীব ইন্দোনেশিয়া।
বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার সেলানগারে মাইন ওয়েলস হোটেলে মাইগ্রেশন নিয়ে অাঞ্চলিক পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নেয়া বেসরকারি সংস্থ্যা ইয়াইয়াসান জিউতানিওই’র (yayasan geutanyoe) অার্ন্তজাতিক পরিচালক লিলিঅান্নে ফান (lilianne fan) বাংলানিউজের কাছে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়ার অাচেহ প্রদেশে গত ১০ থেকে ২০ মে’র মধ্যে ১৭৪৪ জন রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেন সেখানকার জেলেরা। এই মানুষগুলো এর অাগে একমাস ধরে পানিতে ভাসছিল। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে এবং বাংলাদেশিদের অভিবাসনের প্রলোভনের শিকার হিসাবে গণ্য করছে সে দেশের সরকার।
রোহিঙ্গাদের অবস্থা বুঝে এক বছর রাখা হবে এবং বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে বলে জানান ফান।
বর্তমানে অাচেহ প্রদেশে ১৫৯৭ জন শরণার্থী ও অভিবাসনের শিকার মানুষ রয়েছে। উদ্ধারপ্রাপ্তদের মধ্যে গত ১৮ মে অাচেহ উতারাতে ২৫ বছর বয়সী একজন বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু হয়। এছাড়াও ২০ মে ৩ বছরের এক রোহিঙ্গা কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় অভিবাসনের প্রলোভনের শিকার যেসব বাংলাদেশি ইন্দোনেশিয়ায় অাশ্রয় নিয়েছে, তারা সকলেই পুরুষ।
ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে অাচেহ প্রদেশের চারটি প্রশাসনিক এলাকায় রয়েছে। দক্ষিণ অাচেহ’তে বর্তমানে ২৩১ জন বাংলাদেশি রয়েছে। এখান থেকে ১৯ জনকে দেশে পাঠানো হয়েছে। এরা সকলেই ১০ মে সাগর থেকে উদ্ধার হয়েছিল।
সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে, লাংসা মিউনিসিপ্যালিটিতে। এখানে গত ১৫ মে সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ৩০৮ জনকে অাশ্রয় দেয়া হয়। এই ক্যাম্প থেকে ইতোমধ্যে ১২৮ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, লাংসাতে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিরা নৌকায় থাকার সময় নিজেদের মধ্যে ভয়ংকর সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। তাদেরকে যখন ইন্দোনেশিয়ান জেলেরা উদ্ধার করে, তাদের শরীরে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়। উদ্ধারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে সংঘর্ষে নৌকায় প্রায় ১০০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ধার হওয়ার মধ্যে অাহত ৬০ জনকে ১৫ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত লাংসা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তারা ডি-হাইড্রেসন, মাথার অাঘাত, ক্ষত, অপুষ্টি এবং অাত্মহত্যার প্রবণতায় ভুগছিলেন। তাদের চিকিৎসার সব খরচই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করে।
তবে তামিয়াংয়ে একই দিনে উদ্ধার হওয়া ৯ বাংলাদেশির কেউই এখনো ফেরৎ অাসেননি।
২০ মে উদ্ধার হন ৯২ জন বাংলাদেশি। তারা সকলেই পশ্চিম অাচেহর ক্যাম্পে রয়েছেন। এই ক্যাম্পে উদ্ধার হওয়া মানুষরা অপুষ্টি ও ডিহাইড্রেশন ছাড়াও নৌকায় দালালদের নির্যাতনের শিকার। পানিতে ভাসমান অবস্থায় শেষদিকে বেশ কয়েকদিন তারা অভুক্ত ছিলেন বলে জানান এই মানবাধিকার কর্মী।
পশ্চিম অাচেহতে বর্তমানে ব্যাক্তিগত মালিকানার জমিতে তাবু টানিয়ে এসব অভিবাসী ও শরণার্থীদের রাখা হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার এসব শরণার্থীদের সরকারি জায়গায় স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন।
ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার হওয়া সকল বাংলাদেশিদেরই বয়স ২৬ বছরের ওপরে।
ফান বলেন, ‘অামি এমন দুজন বাংলাদেশি মৌলবীকে পেয়েছি যাদের বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। তারা এর অাগে সৌদি অারবে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে ছিলেন। সৌদিতে সমস্যা হওয়ায় তারা দেশে ফিরে অাসেন এবং পুনরায় মালয়েশিয়া পৌঁছানোর জন্য নৌকায় পাড়ি দেন।
তিনি বলেন, যে ১৪৭ জন বাংলাদেশিকে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে, তাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অামরা ভাবছি। কারণ দেশে পৌঁছানোর পর অার তারা যোগাযোগ করেনি।
অাইওএম’এর সহযোগিতায় বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া সরকার ক্যাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করছে। রমজানে প্রতিদিনই ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে মানবপাচার রোধ করতে দেশগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।