
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা ॥
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদ উল ফিতর। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ উৎসবগুলোর একটি। এমন মাহেন্দ্রক্ষনে প্রত্যেকের ব্যস্ততা থাকে ঈদকে ঘিরে। ধনী গরীব থেকে শুরু করে ছোট বড় সব বয়সীর মাঝে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
তবে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জনপদ শ্যামনগরে এবারের চিত্র সম্পুর্ন ভিন্ন। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যে পড়া উপকুলবাসীর এবারের ঈদ উৎসব কেড়ে নিয়েছে ‘আম্ফান’। পানিতে তলিয়ে থাকা ঘরবাড়ি উদ্ধারসহ দিনে অন্তত একবার খাবারের চিন্তায় ব্যাকুল পরিবারগুলোর কাছে তাই পৌছেনি ঈদ উল ফিতরের আনন্দ। শোবার মত জায়গা না থাকার সময়ে নুতন জামা জুতা আর সেমাই লাচ্চা খাওয়ার কথা কল্পনাতেও আনতে দ্বিধা তাদের।
সাইক্লোন শেল্টার আর খোলা আকাশের নিচে রাত-দিন পার করে দেয়া পরিবারগুলো ‘দুঃস্বপ্নের মধ্যে বসবাস’ করছে উল্লেখ করে জানায় ‘বেঁচে থাকার জন্য যারা লড়ছে, ঈদ উৎসব তাদের জন্য না’।
ভাঙনমুখে থাকা দাতিনাখালীর শামিমা খাতুন বলেন, তিনবেলা খাবার জুটতেছে না, তাই ঈদ নে কোন ভাবনা নি। কোন জাগা থেকে কিছু পালি ছাবাল মেয়ে দুটোর সেমাই পায়েশ খাবিয়ে ঈদ এর দিনডা কাটিয়ে দেবানে।
‘আম্ফান’ আঘাতে লন্ডভন্ড শ্যামনগরের নেবুবুনিয়া, জেলেখালী, গোলাখালী, বুড়িগোয়ালীনি, দর্গাবটি আর দাতিনাখালী এলাকা ঘুরে ও দুর্গতদের সাথে কথা বলে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
বানের তোড়ে বাস্তচ্যুত হওয়া দুর্গত এ জনপদের হাজারও পরিবারে কাছে এবারের ঈদকে ঘিরে তাই কোন উচ্ছ্বাস নেই। ঈদ এর সেমাই পায়েস খাওয়ার চেয়ে তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে ভাঙন কবলিত উপকুল রক্ষা বাঁধ। বাস্ত ভিটায় ফিরতে উম্মুখ ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছে করোনার মধ্যেও ঈদকে ঘিরে ছ্টো প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বুধবারের ঘূর্ণিঝড় সব স্বপ্নকে ভেঙেচুরে দিয়েছে।
বুড়িগোয়ালীনি গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, ভাটায় ফিরলেও জোয়ারে বাড়ি ছাড়তি হচ্ছে, মাছের ঘের আর কাঁকড়ার প্রজেক্ট পানিতে তলিয়ে গেছে। এমন দুরাবস্থার ভেতর নামায আদায়ের মধ্যে আমাগো ঈদ সীমাবদ্ধ। আর সেমাই লাচ্চা খাওয়ার খুশির চেয়ে ভাঙন কবলিত বাঁধে কাজ করা জরুরী হয়ে গেছে। তাই ঈদ এর নামায শেষে অন্যদের সাথে মিলে বাঁধের কাজে যাবেন বলেও জানান তিনি।
শুধু আব্দুল জলিল, আর শামিমা না। বরং আম্ফান এর তান্ডবের শিকার সর্বস্ব হারানো প্রতিটি মানুষের অভিযোগ তাদের ঈদকে ছিনিয়ে নিয়েছে আম্ফান। করোনার কারনে আগে থেকে হুমকির মধ্যে থাকা ঈদ উৎসব আম্ফান এর ধাক্কায় একেবারেই শেষ হয়ে গেছে বলেও দাবি তাদের।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানায় ঈদ নিয়ে তাদের মধ্যে আর কোন উম্মাদনা অবশিষ্ট নেই। করোনার শুরু থেকে আয় রোজগারহীন থাকায় চরম অর্থকষ্ট চলছিল। সর্বশেষ আম্ফান তান্ডব তাদেরকে ঈদ এর কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তভিটায় ফিরতে পারার স্বপ্ন সত্যি হলে তারা আবারও ঈদ নিয়ে আনন্দ করার নুতন ছবি আঁকবে।
বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের পানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, করোনা এবং আম্ফান এর জন্য সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা ঈদ পার করবে। তবে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ দরকার ছিল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, ঈদ উপলক্ষে পুথক কোন বরাদ্দ না আসায় করোনা ও আম্ফান এর জন্য পাওযা বরাদ্দগুলো জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে পৌছে দেয়া হচ্ছে।#