উন্নয়ন বঞ্চিত কপিলমুনি হাসপাতাল


670 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
উন্নয়ন বঞ্চিত কপিলমুনি হাসপাতাল
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬ খুলনা বিভাগ ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি ঃ
প্রতিষ্ঠার পর ৯০ বছর পার করে ৯১-তে পা রেখেছে কপিলমুনি হাসপাতালটি, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই রুগ্ন। জনবল সংকট আর অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়লেও কেউ খোঁজ নেয়নি চির অবহেলিত এ হাসপাতালটির।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পাইকগাছা, কয়রা ও তালা থানার লাখ লাখ মানুষ সে সময় ছিল সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। তাই বৃহৎ এই কয়’টি থানার অসংখ্য মানুষের সুচিকিৎসার কথা ভেবে কপিলমুনির প্রয়াত দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ১৯২৫ সালের ৭এপ্রিল ৩একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ২০ শয্যা ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। মার্বেল পাথর খচিত সুরম্য অট্টালিকা, ডিসপেনসারী কক্ষ, কলেরা ওয়ার্ড, কর্মচারী কোয়াটার, ডাক্তারদের আবাসিক ভবন, লাশ রাখার ঘর, শৌচাগার, অপারেশন থিয়েটার, ডেলিভারী কক্ষ সহ লোহার তৈরী ঘোরানো পেচানো সিড়ি, বৃহৎ একটি পুকুর, সীমানা প্রাচীরসহ কোলকাতা থেকে আনা আধুনিক যন্ত্রপাতি। যার অনেক কিছুই এখন নষ্ট হয়ে গেছে, আধুনিক সেই সব যন্ত্রপাতি হাসপাতালটিতে এখন আর চোখে পড়েনা। মহা-দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ২০শয্যার হাসপাতালটি ১৯৭১ সালে সরকারী করণের সময় প্রতিষ্ঠাতার দেওয়া নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় কপিলমুনি ১০ শয্যা সরকারী হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েকবার সরকার ও স্থানীয় নের্তৃত্বের পরিবর্তন আসলেও কপিলমুনি হাসপাতালটির উন্নয়ন হয়নি। বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপিরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো  বাস্তবের অপেক্ষায়। সংসদ নির্বাচনের সময় হাসপাতালের উন্নয়নের কথা বলে ভোট প্রার্থনা করলেও নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্যরা সে কথা ভুলে যান।
সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, এখানে ২ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসায় নিয়োজিত মাত্র ১জন মেডিকেল অফিসার। যিনি রাত দিন অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ১জন, এছাড়া রয়েছন নার্স ২ জন, ফার্মাসিস্ট ১জন, এম এল এস এস ২ জন, সুইপার ২ জন, বাবুর্চী নাইটগার্ড ও ওয়ার্ডবয় নেই। জরুরী রোগী স্থানন্তর করার জন্য এ্যাম্বুলেন্স নেই। হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, ২জন মেডিকেল অফিসার ও ৪ জন নার্স নিয়োগের কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটা করেননি।
কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার এম কে হক রানা এ প্রতিবেদককে জানান, এখানে ডাক্তার, নার্সসহ পর্যাপ্ত জনবল নেই। প্রতিদিন ২/৩ ‘শ রোগী দেখতে হয়, বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তিনি আরো জানান, সুচিকিৎসার জন্য এখানকার জনবল বাড়াতে হবে, রোগীর জন্য এ্যাম্বুলেঞ্জ ইমার্জেন্সী রুম ও ডাক্তারদের কোয়াটার নেই। রোগী আছে কিন্তু বিভিন্ন সরমঞ্জাম না থাকার কারণে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। বর্ষা মৌসুম এলে হাসপাতালটির চারদিকে পানি জমে যায়।
এদিকে হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা আরিফুল শেখ (৪৩) বলেন, এখানে সব কিছুর অভাব, উন্নত চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার ও যন্ত্রপাতি নেই। ফলে জরুরী রোগীগুলো খুলনা, যশোর, ঢাকা আবার কখনো বিদেশে নিতে হচ্ছে।
এই হলো কপিলমুনি হাসপাতালের সার্বিক চিত্র। স্থানীয়রা বলছেন, ৯১ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে দিতে হাসপাতালটি এখন হয়তো বা নিজেই রোগী হয়ে গেছে, যেটা ভিতরে প্রবেশ না করলে বোঝা যাবে না। তাঁরা বলছেন, এমন কি কেউ আছেন যিনি এ রুগ্ন প্রতিষ্ঠানটির একটু খানি উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারেন?