
পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি :
খুলনা জেলার বৃহত্তর কপিলমুনি এলাকার লাখ লাখ মানুষের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে গেল, যুগ যুগ ধরে এলাকার গণ মানুষের লালিত স্বপ্ন কপোতাক্ষ নদীর উপর কপিলমুনির-কানাইদিয়া সেতু বাস্তবায়ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক চিঠিতেই যেন ভেস্তে গেল।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি জেলার যোগাযোগ ব্যাবস্থা জোরালো করার জন্য খুলনা-সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক সংযোগ অর্থাৎ কপোতাক্ষ নদীর উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণের দাবীটি ছিল কয়েক যুগ পূর্বের। সেই দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজে ব্যয় ধার্য্য করে ১কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯শ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা। কাজের মান উন্নয়নের জন্য জন্য পরবর্তীতে বাজেট বাড়িয়ে করা হয় ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এন হক এসোসিয়েট নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা আই এফ আই সি ব্যাংক খুলনা হতে উত্তোলন করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। যা নিয়ে খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা হয়। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা জটিলতাসহ নানান কারণে সেতু নির্মাণ কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেতুটির বাকি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে ইসলাম গ্রুপের নামের আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কপোতাক্ষ নদের ¯্রােতে বাঁধা পাবে মর্মে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এরপর সেতু নির্মাণ কাজ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খুলনা সাতক্ষীরা বাইপাস পাইকগাছার কপিলমুনি-কানাইদিয়া সড়ক সংযোগ সেতু নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ১৫ বছরেও শেষ হয়নি। বৃহত্তর এ জনবহুল এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে।
কপিলমুনি এলাকার বিশিষ্ট চাউল ব্যবসায়ী সুকান্ত কুমার মনা বলেন, সেতু নির্মাণ হলে খুলনার পাইকগাছা হতে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমে যেত। যোগাযোগ ব্যাবস্থার সার্বিক উন্নয়নসহ বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করতো এলাকার অসংখ্য মানুষ। কিন্তু সে গুড়ে যেন বালি পড়ে গেল, এ জীবনে আর হয়তো দেখা হবে না আমাদের এ স্বপ্নের সেতু।
###
সেতুটি নিজ খরচে নির্মানের স্বপ্ন দেখতেন রায় সাহেব
————————————————
বিষয়টি ভাবতে অবাক লাগে। কপোতাক্ষ নদীর উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নিজ খরচে নির্মানের উদ্যোগ নেন দক্ষিণ খুলনার অন্যতম দানবীর স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধূ। তিনি আমরণ নিভ্রৃত পল্লী এলাকা কপিলমুনির গণ-মানুষের দুঃখ দূর্দশার কথা সব সময় মাথায় রেখে মানুষের সেবার জন্য সম্পূর্ণ নিজ খরচে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খাড়া করে গেছেন। বাং ১৩৩৯ সনে বিনোদগঞ্জ বাজার স্থাপনের পর এলাকার সমৃদ্ধি ও যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নত করার জন্য তিনি এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নেন। তিনি এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার কথা ভেবে আমি নদীর উপর নিজ খরচে সেতু নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি”। কিন্তু তাঁর সে প্রস্তাবে নদীর ওপার অর্থাৎ তালা থানার কানাইদিয়ার কতিপয় অর্বাচিন লোক তীব্র বিরোধীতা করেন। সেই সময় সেতুটি তিনি নির্মাণ করতে পারেননি। ফলে দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পুরনে তিনি ব্যর্থ হন, কিন্তু নিরাশ হননি। রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধূ ওই সময় কলিকাতা রিজার্ভ ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা রেখে এলাকার ওইসব অর্বাচিন লোকের উদ্দেশ্যে বলেন, “ কপোতাক্ষ নদীর উপর সেতু নির্মানের জন্য ৫০ হাজার টাকা রেখে গেলাম, যদি কখনো তোমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয় আমার এই রক্ষিত টাকা সেতু নির্মাণের কাজে লাগাইও। কিন্তু র ায় সাহেবের শেষ ইচ্ছেও পূরণ হয়নি; দেশ ভাগের পর সে টাকা ওই ব্যাংকেই রয়ে যায়।
কপোতাক্ষ পাড়ের বাসিন্দা কেষ্ট পদ দত্ত বলেন, আমাদের এ সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের দিকে চেয়ে থাকতো হতো না যদি কিনা সে সময় রায় সাহেবের প্রস্তাবে বিরোধীতা না করা হতো।