
পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি :
দেশের বৃহত্তম ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কপিলমুনি বাজার ধ্বংসের দরজায় পৌঁছেছে। বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি জায়গাগুলো খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে, যা একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এমনটি হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্তারা থাকলেও ঠুটোজগন্নাথের মতো রয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে বাজারের অনেক জায়গা পরিত্যক্ত ও পতিত হয়ে গেছে। পচা কাদাপানি আর বর্জ্য পচনের দুর্গন্ধে বাজারের পরিবেশ মারাত্মক দুষণ ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বছরের প্রায় ছয় মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কালচে রঙের পানিতে ডুবে থাকে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী ধান্যচত্ত্বর, বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়ের মাঠসহ সম্মুখভাগ, কেন্দ্রিয় মসজিদের সামনে ও দক্ষিণ পাশের খোলা বাজার চত্ত্বর, পুলিশ ফাঁড়ির পিছন ও সম্মুখভাগ, কাপুড়িয়াপট্টির প্রধান সড়ক, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে পাইকারী কাঁচা সবজি বাজার, মাংস বিক্রির চাদনীর পিছনের অংশ, বালির মাঠ সংলগ্ন দক্ষিণ অংশ প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে কাঁদা পানিতে ভরা থাকে। আর এসবের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। অনেক জায়গা পরিত্যক্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে অন্য এলাকায় ব্যবসা পেতেছে। পন্যদ্রব্য আমদানী-রপ্তানীতেও ভাটা পড়েছে। পান, পাইকারী সবজি, হলুদ, ধান, গাছের চারা সহ আরও অনেক পন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এ সব পন্যের বাজার এখানে আশংকাজনক ভাবে সংকুচিত হয়েছে। বাজারের পরিবেশ না থাকায় ক্রেতার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এক সময় দেশের ভিতরে ছাড়াও কোলকাতায় বিভিন্ন পন্য রপ্তানী করে কপিলমুনি সুখ্যাতি অর্জন করে। সেই ধারাবাহিকতায় কপিলমুনি দেশের অন্যতম মোকাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফি বছর পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে রাজস্ব দেয়া হয় এখান থেকে। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখানে বিমাতা সুলভ আচরণ করা হয়ে থাকে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখানে দিন দিন বেড়েই চলেছে অথচ নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে এখানকার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থান, নৌ ও স্থল পথে যোগাযোগের অনুকুল পরিবেশ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষানীয় অবদান রাখার সম্ভাবনাময় কপিলমুনিকে পশ্চাৎমুখী করায় এ জনপদের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। সরকারিভাবে বাজারের উন্নয়নের জন্য এখনই পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি।
কপিলমুনি গুণীজন স্মৃতি সংসদের সভাপতি আঃ সবুর আল্ আমীন বলেন, ‘ কোম্পানী শাসনের প্রথম দিকে বাজারের গোড়াপত্তন হয়। কপোতাক্ষ নদের পূর্ব পাড়ে স্বল্প পরিসরে গ্রাম্য বাজার হিসেবে প্রকাশ পায় কপিলমুনি বাজার। আর প্রায় দেড়’শ বছর পর আধুনিক কপিলমুনির নির্মাতা দানবীর স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু নিজ অর্থ ব্যয়ে জায়গা কিনে বাজারের পরিধি বাড়ান। তিনি যেটা করে গেছেন তারপর সরকারী ভাবে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি এখানে’।
কপিলমুনির লাগোয়া আশপাশের অঞ্চলগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, সড়ক সংস্কার, পানি নিষ্কশন ব্যবস্থা, বাজারের পরিত্যক্ত ও পতিত জাগা ভরাটসহ ভূমি দস্যুদের কাছ থেকে বাজারের মূল্যবান জায়গা উদ্ধার করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই প্রসিদ্ধ বাজারকে সমৃদ্ধি করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এ জনপদের মানুষ।