
বিশেষ প্রতিনিধি :
কলারোয়ায় সোনালী ব্যাংকের দুই নৈশ প্রহরী খুনের লোমহর্ষক ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় মামলা করেছে। মামলাটি তদন্তের জন্য বুধবার রাতেই সাতক্ষীরা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের সাবইন্সপেক্টর ইমরান হোসেনকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। মামলার সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য সাতক্ষীরা সদর সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার আঈদকে নিয়োগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, একাধিক ক্ল নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে পুলিশের কাছে এখনও পরিস্কার না, কারা ও কি কারনে দুই নৈশ প্রহরী খুন হল।
এদিকে, ঘটনার রাতে সোনালী ব্যাংকে কর্তব্যরত নিহত আনসার বাহিনীর সদস্যের কাছে কেন অস্ত্র ছিল না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কলারোয়া থানার ওসি আবু সালেহ মো: মাসুদ করিম ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, বুধবার বিকেলে সোনালী ব্যাংক কলারোয়া থানার ম্যানেজার মনতোষ কুমার সরকার বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। যার মামলা নং ১৮। তবে এই মামলায় কাউকে আসামীর শ্রেণীভূক্ত করা হয়নি। মামলাটি বুধবার রাতেই সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় এখনও কাউকে গ্রেফতার বা আটক দেখানো হয়নি। তবে কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা ডিবি ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মামলাটি বুধবার রাতেই তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশের এস আই ইমরান হোসেনকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।ডিবি পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘটনের জন্য ইতিমধ্যে মাঠে নেমেয়ে। একাধিক ক্ল নিয়েই তারা কাজ করছে।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাচ্ছের হোসেন ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে বলেন, ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা ) তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পুলিশের কাছে নেই। তবে পুলিশ একাধিক ক্ল নিয়ে মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন, মামলার সার্বিক তদারকির জন্য সাতক্ষীরা সদর সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদকে নিয়োগ করা হয়েছে। পুলিশ মাঠে রয়েছে। তিনি বলেন, একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে এখনও গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। এই মামলার উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য বা আপডেট তাদের কাছে নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে, ঘটনার রাতে নিহত দুই আনসার সদস্যের কাছে অস্ত্র না থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কি কারণে অস্ত্র ব্যাংকের ভল্টের ভিতর ছিল তা খতিয়ে দেখা জরুরী বলে সচেতন মহল মনে করেন। সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের (মেইন সড়কে ) মহাসড়কের ধারে এবং কলারোয়া থানা থেকে মাত্র ৪’শ গজ দূরের এই লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসী হতবাক। তারা দ্রুত মর্মান্তিক এই ঘটনার সাথে জড়ীতদের গ্রেফতার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে কলারোয়া সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মনতোষ কুমার সরকার ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে বলেন, ব্যাংকের নিয়মই হচ্ছে ব্যাংক বন্ধ হওয়ার আগেই অস্ত্র ব্যাংকের ভল্টে আটকে রাখতে হবে। নৈশ প্রহরীর কাছে রাতে অস্ত্র রাখার কোন বিধান নেই। বিধায় ঘটনার রাতে অস্ত্র ভল্টের ভিতরে ছিল। তিনি বলেন, ভল্ট কেটে টাকা বের করার চেষ্টা করেছিল দুর্বৃত্তরা। এতে প্রমানীত হয় এটি ডাকাতির চেষ্টা। ভল্ট কাটতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা নৈশ প্রহরীকে জবাই করে হত্যা করেছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কলারোয়ায় সোনালী ব্যাংক (কলারোয়া উপজেলা শাখা ) শাখায় কর্মরত দুই নৈশ প্রহরীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার ঝাপাঘাটা গ্রামের আব্দুল কায়ুমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও সাতক্ষরী সদর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে আসাদুল ইসলাম (৩০)। তারা দুই জনই আনসার বাহিনীর সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটলেও ব্যাংক সরকারি ছুটি থাকায় বুধবার বেলা ১১ টার দিকে বিষয়টি জানাজানি হয়।