কালিগঞ্জের চিংড়িখালি ভূমিহীন জনপদে গনপিটুনিতে আশরাফ মীরসহ ২ জন নিহত। অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার


615 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
কালিগঞ্জের চিংড়িখালি ভূমিহীন জনপদে গনপিটুনিতে আশরাফ মীরসহ ২ জন নিহত। অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার
আগস্ট ২৪, ২০১৫ কালিগঞ্জ ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

ইব্রাহীম খলিল / সুকুমার দাশ বাচ্চু :
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের চিংড়িখালি ভূমিহীন জনপদে সরকারি খাস জমি দখলকে কেন্দ্র করে গনপিটুনিতে আহত ভূমিহীন নেতা আশরাফ মীর ও ইসহাক পাড় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এ ঘটনায়  কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পাইপগান ও ৩টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে।

কালিগঞ্জ থানার এস আই শহীদুল্লাহ গনপিটুনিতে নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার কাশিবাটি গ্রামের ভূমিহীন নেতা আশরাফ মীর (৬০) ও তার সহযোগি একই এলাকার ইসহাক আলী পাড় (৫৮)।

এদিকে, এই হত্যার ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থলে সহকারী পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেনের  নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারন সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, বিগত ২০০৪ সাল থেকে কালিগঞ্জের বৈরাগিরচক-চিংড়িখালী ভূমিহীন পল্লিতে (৯’শ বিঘা সরকারি খাস জমিতে ) ৪৪৬ ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে আসছে।

তিনি আরও জানান, সোমবার ভোরে কালিগঞ্জের কাজলা কাশিবাটি গ্রামের চিহ্নিত ভূমিদস্যু আশরাফ মীরের নেতৃত্বে ৫০/৬০  জন অস্ত্রধারী  সন্ত্রাসী চিংড়িখালী ভূমিহীন জনপদে গিয়ে সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে আকষ্মিক হামলা চালায় ।  এতে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন চিংড়িখালি ভূমিহীন জনপদের ফিরোজ, গফুর ও  মনিসহ বেশ কয়েকজন ।  এছাড়া এ ঘটনায় আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে ।

চিংড়িখালির ভূমিহীনরা জানান, হামলাকারীরা  কমপক্ষে ৪০ টি বোমার বিস্ফোরন ঘটায় ।  তারা গুলিও ছোড়ে ।  এতে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে ।

স্থানীয় ভূমিহীনরা আরও জানান, সাহস করে কয়েকজন ভূমিহীন আশরাফ মীর , তার সহযোগী ইসহাক আলী পাড় ও আবু বকরকে অস্ত্র ও বোমাসহ ধরে ফেলে । পরে তাদেরকে গনপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।  পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে গ্রেফতার ও তাদের কাছ থেকে একটি পাইপগান ও তিনটি তাজা বোমা জব্দ করে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, চিংড়িখালী ভূমিহীন জনপদে এক সময় বসবাস করতো ভূমিহীন নেতা আশরাফ মীর। তিনি সেখানে নেতৃত্বও দিতেন। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ভূমিহীনদেরকে উচ্ছেদ করে সেখানে অর্থের বিনিময়ে নতুন নতুন ভূমিহীন পরিবার তুলে দেয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে ভূমিহীনরা তার বিরুদ্ধে সংগঠিত হন। প্রায় দেড় বছর আগে এসব অভিযোগে চিংড়িখালী ভূমিহীন জনপদ থেকে আশরাফ মীর ও তার অনুসারী ২০/২৫ টি পরিবারকে তাড়িয়ে বা উচ্ছেদ করে দেয়। এর পর থেকে আশরাফ মীর ওই ভূমিহীন জনপদ পুন:রায় দখল করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছিল।

আশরাফ মীর ও তার সহযোগিরা সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির কয়েক জন নেতার কাছে গত প্রায় দেড় বছর ধরে হাটাহাটি করতে দেখা গেছে।

কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত ওসি) মো. শহিদুল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমকে জানান, তিনি ঘটনাস্থলেই আছেন। সোমবার ভোরে ভূমিহীন নেতা আশরাফ মীরের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ চিংড়িখালি ভূমিহীন জনপদে এসে হামলা চালাল। এ সময় সেখানে বসবাসরত ভূমিহীনরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায় আশরাফ মীর ও তার দুই সহযোগি ইসহাক আলী ও আবু বকরকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্য্রে ভর্তি করলে সোমবার সকাল ১০ টার দিকে আশরাফ মীর ও ইসহাক আলী পাড় মারা যায়। আহত আবু বকরের অবস্থা আশংকাজনক বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় ৫ জনকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত আটককের কথা স্বীকার করলেও তিনি তাদের নাম পরিচয় জানাতে চাননি।

এদিকে,এ ঘটনায় আহতদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ভূমিহীন জনপদের পরিবেশ বর্তমানে শান্ত রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মোদাছেছর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

DSC03235

ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকমের কালিগঞ্জ প্রতিনিধি সুকুমার দাশ বাচ্চু জানান, সোমবার ভোরে মীর আশরাফ আলী কয়েকজন লোক নিয়ে বৈরাগীর চক তাদের এলাকায় প্রবেশ করলে অপর ভূমিহীন নেতা ও নলতা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের লোকজন ভূমিহীন নেতা মীর আশরাফ আলী , মোঃ ইসহাক আলী, হাবিব, আবু বক্কার ও বিল কাজলা গ্রামের  ফিরোজ (৪০) তাদের কে আটক করে ধারালো রাম দা দিয়ে এলোপাতাড়ি মাথায়, বুকে, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

ঘটনার সংবাদ পেয়ে  কালিগঞ্জ থানা পুলিশ মারাতœক আহত অবস্থায় ভূমিহীন নেতা মীর আশরাফ আলী, মোঃ ইসহাক আলী ও আবু বক্কার কে সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে কালিগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসে। নিয়ে আসার কিছু পরেই হাসপাতালেই দু,জনের মৃত্যু হয়।

এদিকে, বেলা আড়াইটার দিকে সাতক্ষীরায় বাবলু নামে আরও ১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাগলেও তার তার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।

মীর আশরাফের পুত্র হাবিব (২৫) ও অজ্ঞাত ফিরোজ কে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত দু’জনের লাশের ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। বৈরাগীর চক ভূমিহীন এলাকা থেকে পুলিশ একটি দেশীয় পাইপগান, দুটি তাজা বন্দুকের গুলি, ৩টি হাত বোমা উদ্ধার সহ আবুল হোসেন বাহিনীর ৫ জন কে আটক করেছে বলে জানাগেছে। তবে তাদের পরিচয় এখনও জানাযায়নি।

কালিগঞ্জ থানার এস,আই ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি মোঃ শহিদুল¬াহ জানায়, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পরপরই সহকারী পুলিশ সুপার কালিগঞ্জ সার্কেল মীর মনির হোসেনের নেতৃত্বে আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং অভিযান অব্যহত আছে। ঘটনাস্থল এলাকায় সাতক্ষীরা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নিহত আশরাফ মীরের সমর্থকরা জানান, ভূমিহীন নেতা মীর আশরাফ বৈরাগীরচক-চিংড়িখালী ভূমিহীন জনপদে  দীর্ঘদিন নেতৃত্বে ছিলেন। নলতা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ও করিমের নেতৃত্বে বৈরাগীর চক থেকে মীর আশরাফ ও তার সমর্থকদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে তারা ভোগ দখল করে আসছিল। এই নিয়ে মীর আশরাফ ও আবুল হোসেন গংদের সাথে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর মনোমালিন্য চলে আসছিল।