ক্যান্সার ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ বাড়ছে


645 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
ক্যান্সার ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ বাড়ছে
জুন ৩০, ২০১৫ খুলনা বিভাগ জাতীয় স্বাস্থ্য
Print Friendly, PDF & Email

 

ভয়েস ডেস্ক :
দেশে অসংক্রামক ব্যাধি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গত পনেরো বছরের ব্যবধানে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং আর্থ্রাইটিসের মতো অসংক্রামক ব্যাধি তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। গত দুই বছরে হৃদরোগ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্বাস্থ্য ও রোগ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল জরিপটি প্রকাশ করেছে।

তামাকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, অ্যালকোহল গ্রহণ, ভেজাল খাদ্য এবং লাইফস্টাইলের পরিবর্তনের কারণে অসংক্রামক ব্যাধি ভয়াবহভাবে বেড়ে চলছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণে ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটাচলা, পুষ্টিকর খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।

২০১৪ সাল ভিত্তিক এ জরিপে তথ্য মতে, সর্বাধিক আক্রান্ত ১০টি রোগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জ্বর। প্রতি হাজারে ১৯ দশমিক ১০ জন জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এরপরই ধারাবাহিকভাবে রয়েছে আলসার, বাত, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বক্ষব্যাধি, আমাশয়, হৃদরোগ এবং চোখের ছানি। বিবিএসের সর্বশেষ স্বাস্থ্য ও রোগ জরিপ অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই বছরের ব্যবধানে আর্থ্রাইটিসে প্রতি হাজারে ১৪ থেকে ১৭ দশমিক ১৬ জনে, ডায়াবেটিসে ৭ দশমিক ৮ জন থেকে ১০ দশমিক ৫১ জনে, হৃদরোগে ৩ দশমিক ৩ জন থেকে ৬ দশমিক ৫৯ জন এবং ক্যান্সারে দশমিক ছয় থেকে দশমিক ৭১ জন আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০ সালে বিবিএস পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭ জন, ২ দশমিক ৭ জন, ১ দশমিক ৬ জন এবং দশমিক ৪ জন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান সমকালকে বলেন, মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কয়েক বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। তিনি বলেন, তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল, ধূমপানের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য অভ্যাসেও পরিবর্তন হয়েছে। খাদ্যে ভেজালও বেড়েছে। এসব কারণে অসংক্রামক রোগ দিন দিন বাড়ছে।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বিবিএস অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য ও রোগ জরিপ-২০১৪ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কানিজ ফাতেমা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিবিএসের মহাপরিচালক আবদুল ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জরিপটির পরিচালক জাফর আহাম্মদ খান প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। সারাদেশে ৩৭ হাজার ৫০০ পরিবারের ওপর এ নমুনা জরিপ পরিচালনা করা হয়।

বিবিএসের জরিপের তথ্য মতে, তামাক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার করে ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ধূমপান ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, তামাক পাতা ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, মদ দশমিক ৩০ শতাংশ, ফেনসিডিল দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, হেরোইন দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, জর্দা গুল ৪ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ইয়াবা ব্যবহার করে দশমিক শূন্য ১ শতাংশ মানুষ।

৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের যে সমস্ত রোগ বেশি হয় তার মধ্যে জলবসন্ত শীর্ষে। তারপর পর্যায়ক্রমে চক্ষু প্রদাহ, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, হাম, বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস প্রসাবের রাস্তায় প্রদাহ, চর্মরোগ, উদরাময় বা ডায়রিয়া ইত্যাদি। টিকাদান সম্পর্কে জরিপে দেখা যায়, দেশের ৭৪ দশমিক ১০ শতাংশ মায়েরা টিকাদান সম্পর্কে জানেন। আবার ২৫ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ মায়েরা জানেন না। ৭১ দশমিক ৩৩ শতাংশ সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জন্মগ্রহণ করে আবার ২৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ সন্তান সিজারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে বলে এ জরিপে বেরিয়ে এসেছে।

এ জরিপের মাধ্যমে আরও যে সমস্ত বিষয় তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক জনসংখ্যার বর্তমান বিয়ের শতকরা হার, লিঙ্গভিত্তিক জনসংখ্যার শিক্ষার হার (৫ বছর ও তদূর্ধ্ব), এলাকাভেদে খাবার পানির উৎস, আলোর উৎস, এলাকাভেদে মশা থেকে প্রতিরোধের উৎস, খানা থেকে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাসমূহের দূরত্ব ইত্যাদি।