
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবীতে আগামী সোমবার(১৬মে)রাজপথে নামছেন খাগড়াছড়ির অতিষ্ঠ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এ কর্মসূচির বিষয়ে ইতোমধ্যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে(ফেইসবুকে) খাগড়াছড়ির যুব সমাজরা জানান দিয়েছেন। কর্মসূচি পালনের বিষয়ে জেলা শহরের স্থানীয় যুবক মো: রানা হামিদ জানিয়েছেন, খাগড়াছড়িতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবীতে আগামী ১৬মে(সোমবার) সকাল ৯টায় জেলা শহরের শাপলাচত্বরে অবস্থান কর্মসূচিসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ডাকে এক ঘন্টা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রেখে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিবে সকল ব্যবসায়ীসহ অতিষ্ঠ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। যুব সমাজের এই যুবক উক্ত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে পালনে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণসহ সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছন।
উল্লেখ্য খাগড়াছড়িতে চলমান রয়েছে বিদ্যুতের চরম বিভ্রাট। সপ্তাহে ৪দিনের অধিক বিদ্যুৎ থাকে না। থাকলেও লো-ভোল্টেজ। এসব কারনে খাগড়াছড়ি বিদ্যুতের গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর আগেও গত বছর একই দাবীতে খাগড়াছড়িতে ঝাড়ু মিছিল বের করে খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতিসহ অতিষ্ঠ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাবাসীর দাবি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎতের সুবিধা চায় বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সাধারন গ্রাহকরা। ১৩মে খাগড়াছড়িতে সারাদিন ধরে বিদ্যুত নেই। এতে এলাকাবাসী নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ীদের উদ্দ্যোগে মেয়র মো: রফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ বিতরন বিভাগ অফিস ঘেরাও কর্মসূচী করেও কোন প্রতিকার পায়নি । খড়া প্রচন্ড গরমে খোদ ২৯৮নং আসনে সংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ফোনে খবর নিয়ে জানতে চাইলেও তাও কোন আশানুরুপ বা ভাল ফল পাওয়ার কথা থাকলেও তা আবার লোড-শেডিং বেড়ে দিগুন হয়ে সাধারন গ্রাহকদের যেন ভোগান্তির অবসান নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি জেলার জনসাধারণকে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। বেশ কয়েক মাস হলো এই অবস্থা চলছে। সামান্য সাধারণ বৃষ্টি বা বাতাস আসলেও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া কালবৈশাখীর মতো বড় আকারের ঝড়বৃষ্টি আসলে বিদ্যুৎ থাকে না কয়েক ঘন্টা ধরে। আর বিদ্যুত আসলেও লো ভোল্টেজের কারণে কোনো কাজই করা দায় হয়ে পড়ে।
৯টি উপজেলায় বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ মহামারীতে অতিষ্ট প্রায় ১লাখ ৫০হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং এ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে গ্রাহকরা। গত কয়েক মাস সকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও তা আসা-যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই লোডশেডিং এর মাত্রা বেড়েছে অনেক গুন। ফলে অচল হয়ে পড়েছে পুরো মাটিরাঙ্গার জনজীবন। সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে মাটিরাঙ্গার কর্মজীবি, শিক্ষার্থী, গৃহিনী ও ব্যবসায়ীসহ সাধারণ গ্রাহকরা। পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় রান্না-বান্নায় বিঘ্ন হচ্ছে। ফ্রিজে রক্ষিত খাদ্যসামগ্রী পঁচে যাচ্ছে।
হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধ হয়েছে অনেকের সেল ফোন। এমনিতে জেলায় দিনে রাতে চলে ৪-৬ঘন্টা লোড শেডিং সাথে যোগ হয়েছে লো-ভোল্টেজ মহামারী আকারে।
মাটিরাঙ্গা বাজার হাজী হোটেলের স্বত্বাধিকারী মো: মাহবুবুল আলম জানান, লো-ভোল্টেজের কারণে প্রায়ই ফ্রিজগুলো নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিমাসে ফ্রিজ মেরামত বাবতে অনেক টাকা বাড়তি খরচ হয়। এছাড়াও সদ্য ক্রয়কৃত পানি তোলার মটরগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। লো-ভোল্টেজের কারনে বাল্বগুলো পর্যন্ত আলো দেয় না পর্যাপ্ত পরিমানে। ফলে প্রায় সময় জেনারেটরের উপর নির্ভর করতে হয়।
এ বিষয়ে বরফ তৈরি কারখানার মালিক মো: কামাল হোসেন জানান,গত কয়েক মাসের টানা লোড-শেডিং আর লো-ভোল্টেজে বরফ তৈরির মেশিনটি একাধিক বার মেরামত করতে হয়েছে যাতে প্রায় ৫০/৬০হাজার টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে।
মোবাইল সার্ভিসিং দোকানদার মো: সোহেল রানা জানান,মোবাইল চেকিংসহ যে কোন অর্থনৈতিক কার্যক্রম করতে না পারায় প্রতিদিন গড়ে ৫০০টাকা লোকশান দিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসায় ধস নামতে পারে ।
এ বিষয়ে গ্রীল ওয়ার্কসপ মালিক মো: মনির হোসেন জানান, গত মাস খানেকের লো-ভোল্টেজকে মহামারীর সাথে তুলনা করে বলেন, এ মহামারীতে আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকার মেশিনারিজ পুড়ে অকেজো হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মো: আমান উল্লাহ চৌধুরী‘কে বিকাল ৫টার দিকে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, তিনি মাসের অধিকাংশ সময়ই ষ্টেশনে থাকেন না। মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা এ পরিস্থিতির অবসান চেয়েছেন।
নবীনগর এলাকাবাসী জানান,৭০হাজার টাকা লো-ভোল্টেজ সমস্যা সমাধানে জন্যে মাটিরাঙ্গার বিদ্যুৎ আবাসিক প্রকৌশলীকে দেয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে কোন ফল না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সচেতন মহল মনে করেন দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি লো-ভোল্টেজ মহামারী সমস্যার সমাধান করা না হয় তাহলে অতিষ্ট বিদ্যুৎ গ্রাহকরা যে কোন সময় ফুসে উঠতে পারে বলে আশংঙ্খা প্রকাশ করেন।