
ওয়াহেদ-উজ-জামান,খুলনা প্রতিনিধি :
নগরীর লবনচরা এলাকায় যুবকের আত্মহত্যার ঘটনাকে পুঁজি করে বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা অর্থ বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন। আত্মহত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে তিনি হত্যা মামলা রেকর্ড করিয়েছেন। তিনি ভূমিদস্যু, হত্যা ও ঘের ডাকাতি এবং জালিয়াতি মামলায় দুদক’র চার্জশিটভূক্ত আসামি জামাল বয়াতীসহ অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক’র কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক মো. মাসুদুর রহমানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আসক’র পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ তুলে ধরে অবিলম্বে এ ধরণের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার, দুর্নীতিবাজ ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লা’র অপসারণ এবং ঘের লুট মামলার আসামি জামালসহ অন্যদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আসক’র খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শাওন অভিযোগ করেন, গত ১৪ জুলাই দুপুর ১২টারদিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারি বিল থেকে সোহাগ খলিফা (২৬) নামক এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে লবনচরা থানা পুলিশ। পরবর্তীতে জানা যায়, সে পারিবারিক কলোহের কারণে আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া নিহত সোহাগের সুরতহাল রিপোর্টেও তার আত্মহত্যাজনিত বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়। অথচ: এ অপমৃত্যুকে পুঁজি করে বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা ভূমিদস্যু ও জালিয়াত সিন্ডিকেটের সাথে আঁতাত করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছেন। ওই মামলায় কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক’র কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক (খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক) মো. মাসুদুর রহমান, তার ভাই বাবুসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর পেছনে জামাল বয়াতী, সহযোগি আসাবুর, লিয়াকত, সোহাগ বয়াতী, মামুন মাঝি, লিটন ও মামুন খলিফাসহ অন্যদের ইন্দন রয়েছে। কারণ গত ১ জুলাই রাতে জালিয়াত চক্রের মূলহোতা জামাল বয়াতীসহ উল্লিখিত আসামিদের কয়েকজন মাসুদুর রহমানের পুটিমারি-রাঙ্গেমারি মৌজার মৎস্য প্রজেক্টে মাছ লুট করতে যেয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় ঘেরের পাহারাদার আব্দুস সাত্তার বাদি হয়ে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় জামাল বয়াতী, মামুন হোসেন ওরফে মামুন মাঝি, সোহাগ বয়াতী, মুরছালিন, সবুজ হোসেন, আহাদুজ্জামান ও আরিফসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু বটিয়াঘাটা থানার ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামালকে ছেড়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, হত্যা মামলা দায়ের করে মঙ্গলবার রাতেই ওসি’র সহায়তায় ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি জামাল বয়াতী, লিয়াকত ও আসাবুরের নেতৃত্বে আসামি মামুনসহ ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী মাসুদুর রহমানের মৎস্য ঘের লুটপাট করে। এমনকি প্রজেক্টের ম্যানেজার মো. সুলতান আহমেদের ঘরবাড়িও লুটপাট করা হয়। এছাড়া এর আগেও ভূমিদস্যু চক্রটি ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ঘেরের পিলার ভাংচুর করে। ওই ঘটনায় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি’র নির্দেশে ওসি মনিরুজ্জামান চাঁদাবাজ লিয়াকতকে আটক করলেও সে আর এ ধরণের অপরাধ করবেনা- মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। কিন্তু পরবর্তীতে ওসি জানায়, তার এলাকায় ব্যবসা করতে হলে থানাসহ চাঁদাবাজদের অর্থ দিতে হবে। এমনকি কয়েকদিন আগেও তিনি মাসুদুর রহমানের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি এ ধরণের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা রেকর্ড করে অর্থ বাণিজ্যে নেমেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে এ ধরণের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার, দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লা’র অপসারণ এবং ঘের লুট মামলার আসামি জামালসহ অন্যদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় যে কোন ধরণের কঠোর কর্মসূচী গ্রহন এবং অনাকাংখিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার জন্য বটিয়াঘাটা থানার ওসিকেই দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার আইন উপদেষ্টাসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।