
ওয়াহেদ-উজ-জামান, খুলনা প্রতিনিধি :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিরোধ চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্র এলাকা অর্জন করেছে। এ অর্জিত সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত, সমুদ্রসীমা সুরক্ষা অবাধে সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনা সময়ের দাবি। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এসব কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য খুলনা শিপইয়ার্ড মাঝারি ও বৃহৎ সমুদ্রগামী জাহাজসহ নৌবাহিনীর জন্য ছোট বড় নৌযান তৈরি ও মেরামত অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতে খুলনার শপইয়ার্ড থেকে জাহাজ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
রোববার দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডে নৌবাহিনীর জন্য দু’টি বড় যুদ্ধজাহাজ লার্জ পেট্রোল ক্রাফট (এলপিসি) নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী (কীল লেয়িং) এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে আমদানীর সঙ্গে সঙ্গে দেশেও তৈরি হচ্ছে যুদ্ধজাহাজ। এক সময়ের রূগ্ন শিপইয়ার্ড ঘুরে দাঁড়ানোয় তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিকে ‘গর্ব ও কর্মোদ্দীপনার প্রতীক’ বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী খুলনা শিপইয়ার্ড এক সময় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিপইয়ার্ডে পরিণত হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশে খুলনা শিপইয়ার্ডই প্রথম বারের মত যুদ্ধজাহাজ লার্জ পেট্রোল ক্রাফট (এলপিসি) নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করায় আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই নদী ও সমুদ্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। যে কারণে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার কাজে হাত দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ যেখানে সমবেত হয়েছি, তার অদূরেই রূপসা নদীতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১০ ডিসেম্বর শহীদ হয়েছিলেন বীর শ্রেষ্ঠ রূহুল আমিনসহ পদ্মা ও পলাশ জাহাজের আরও অনেক নৌ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মহান নৌ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড রূগ্ন ও ধংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ায় তিনি এটিকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। আজ এ প্রতিষ্ঠানটি ‘গর্ব ও কর্মোদ্দীপনার প্রতীক’ হিসেবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তিনি শিপইয়ার্ডে কর্মরতদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নদী বন্দর নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এজন্য দেশে দু’টি নৌ ইন্সস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর ২টা ২০ মিনিটে খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রবেশ করেন। ২টা ৩৫ মিনিটে তিনি নৌবাহিনীর জন্য দু’টি জাহাজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন (কীল লেয়িং) করেন। পরে তিনি ২টা ৪৮ মিনিটে মঞ্চে ওঠে উদ্বোধনী ভাষণ দেন। এর আগে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে তিনি হেলিকপ্টারযোগে খুলনার খালিশপুরস্থ বানৌজা তীতুমীরে অবতরণ করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মংলার দ্বিগরাজে নির্মিত বানৌজা খানজাহান আলী, বানৌজা সন্দীপ ও বানৌজা হাতিয়া নামে তিনটি জাহাজের কমিশনিং এবং নবনির্মিত এলসিটি -১০৩ ও এলসিটি ১০৫ নৌবাহিনীতে সংযুক্ত করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কারো সঙ্গে যুদ্ধ নয়, শান্তিই কাম্য। তবে আত্মরক্ষার ক্ষমতা থাকতে হবে। সমুদ্রসীমায় সম্পদের সুষ্ঠু নিরাপত্তায় সরকার নৌবাহিনীকে আরো আধুনিক করে গড়ে তুলতে কাজ করছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী নতুন জাহাজগুলোকে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কাজে লাগাতে নৌবাহিনীকে আহ্বান জানান।