গাইবান্ধায় ইসির অ্যাকশনকে সঠিক বলেছেন সাবেকরা : সিইসি


149 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
গাইবান্ধায় ইসির অ্যাকশনকে সঠিক বলেছেন সাবেকরা : সিইসি
অক্টোবর ১৯, ২০২২ জাতীয় ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

অনলাইন ডেস্ক ::

গাইবান্ধার উপনির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্তকে সঠিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনারেরা (ইসি)। আজ বুধবার ইসিতে তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এমনটি জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্তের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এই চাপ উতরাতে কমিশনের সাবেক সদস্য ও কর্মকর্তাদের ডেকে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করে নিল কমিশন।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘গাইবান্ধায় ইসির অ্যাকশনটা সঠিক হয়েছে বলে তারা সমর্থন জানিয়েছেন। উনারা আমাদের মুরব্বিজন, গুরুজন হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন-সততার সাথে, সাহসিকতার সাথে আমাদের এগিয়ে যেতে।’

তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে নিজের স্বস্তি প্রকাশ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। আমরা তাদের ডেকেছিলাম-এটা সত্য গাইবান্ধাতে যে একটা ঘটনা ঘটে গেল; আমাদের প্রয়োজন ছিল আরও এনলাইটেন্ড হওয়া; উনাদের তরফ থেকে কোনো গাইডেন্স আছে কিনা, কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন অতটুকু জেনেছি। এটা ক্রিটিক্যাল ছিল। প্রথমবারের মতো বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ ইসি নিয়েছে এবং যথেষ্ট সেনসেশন ক্রিয়েট করেছে সর্বমহলে। এটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য হয়েছে।’

ভোট বন্ধের পরে মূল্যায়ন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মূল্যায়নের খুবই প্রয়োজন রয়েছে। যে কোনো বিষয়ে বিচারক হিসেবে আমরা সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করি-বিষয়টা ঠিক হয়েছে কিনা। আমরা শুদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিনা। আমরা সঠিক মনে করছি। তারপরেও এটা সঠিক নাও হতে পারে। কোর্টে গিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করেন; উনারা যদি বলতেন সঠিক সিদ্ধান্ত নেননি; তখন আমাদের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার প্রয়োজন হতো। সবাই একমত পোষণ করেছেন। ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। সাবেকদের বক্তব্যে নিজেরা উৎসাহিত হয়েছি।’

গাইবান্ধার নির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে-সাবেক এক কমিশনের এমন মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, ‘অপেক্ষ করেন এবং দেখেন। কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ মতবিনিময় সভায় ২৮ জনকে আমন্ত্রণ জানালেও অংশ নেন ১৪ জন। এদের মধ্যে বিতর্কিত মাগুরা উপনির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকারী সিইসি আব্দুর রউফ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সিইসি কে এম নূরুল হুদাও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও এই বৈঠকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মো. শাহনেওয়াজ, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ইসি কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দীন আহমেদ, এমএম রেজা এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমান অংশ নেন।

ইসি কার্যালয় কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন পরে ইসির কোন সিদ্ধান্তে ক্ষমতাসীন দল প্রকাশ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নিকট অতীতে এই ধরণের পরিস্থিতি পড়তে হয়নি ইসিকে। তাই নিজেদের অবস্থানকে জোরালো করতেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। এমন জটিল সময়ে সাবেকদের পাশে পেয়ে সিইসির চোখেমুখে স্বস্তি দেখা গেছে। গাইবান্ধার ভোটে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনের শক্ত অবস্থানের বার্তা দেওয়ার পরামর্শও দেন সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। সেই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানান্তর না করা ও ইভিএম নিয়ে বিতর্কের মধ্যে আস্থা তৈরির আহ্বান জানান তারা। তবে ইভিএম কিনতে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনে সব কেন্দ্রে সিসিটিভির বসানোর পরামর্শ আসছে এই বৈঠকে। অন্যদিকে ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানো এবং তা মনিটরিং কতটা বাস্তব সম্মত সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

১২ অক্টোবর সিসি ক্যামেরায় ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ার পর মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্দেশণা পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন। দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনায় প্রকাশ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। বৈঠকে কমিশন নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না দিলেও নির্বাচন বন্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আমন্ত্রিতদের মতামত চাওয়া হয়।

সাবেক সিইসি আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন ভোটাররা ভোট দিতে পারেন না। একজনের ভোট আরেকজন দেয়; তখন নির্বাচন কমিশন বসে থাকবে কেন? স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এই অধিকার আছে। তাদের চোখের সামনে ধরা পড়ছে। কারচুপি হচ্ছে। প্রয়োজনে বারবার বন্ধ করতে হবে। জাতিকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে।’ বিতর্কিত মাগুরা উপনির্বাচনে এমন সিদ্ধান্ত আপনি কেন নিতে পারেননি-এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। পেছনেরটা টেনে এনে জাতিকে আর অন্ধকারের মধ্যে ফেলবেন না।’ ইভিএম প্রশ্নে তার অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিশন চেষ্টা করতে থাকুক। মানুষ যদি শিক্ষিত হয় তাহলে হবে।’

সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ইসি সাংবিধানিক সংস্থা। ইসিকে সংবিধান ও আইন মোতাবেক কাজ করতে হবে।’ ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগনকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-নতুন ইভিএম খুবই উন্নতমানের। অলমোস্ট ডিজিটাল। কিন্তু এটা তো লোকজনকে জানতে হবে।’

সাবেক সিইসি নুরুল হুদা গাইবান্ধার ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘ইসির এই ক্ষমতা রয়েছে। তারা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে নতুনভাবে আর তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করার দরকার নেই।’