
গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মস্থলে কোনো চিকিৎসককে বদলির পর তা স্থগিত করতে এভাবেই ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাপ সৃষ্টি করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্তত ২৫ চিকিৎসকের বদলির আদেশের পর তা স্থগিত করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকের কাছে জোরালো তদবির করা হয়েছে।
তদবিরকারীদের মধ্যে অন্তত ১০ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপি রয়েছেন। প্রভাবশালীদের জোরালো তদবিরের কারণে চিকিৎসকদের গ্রামে পাঠিয়ে সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সংক্রান্ত সরকারি উদ্যোগ বাধার মুখে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সমকালকে বলেন, দরিদ্র মানুষের ঘরে-ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করাই মন্ত্রী হিসেবে তার প্রধান কাজ। রাজধানী ও এর আশাপাশের হাসপাতালে থাকা অতিরিক্ত চিকিৎসকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে শূন্য পদের বিপরীতে অতিদ্রুত তাদের বদলি করা হবে। কাউকে অযথা তদবির না করারও আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১১ এপ্রিল রাজধানীর আশপাশের কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওএসডি সংযুক্তি নিয়ে অবস্থানকারী অতিরিক্ত ৪২ চিকিৎসককে গ্রামের কর্মস্থলে বদলির আদেশ জারি করে। কিন্তু চিকিৎসকরা গ্রামের কর্মস্থলে যেতে চাইছেন না। বদলির আদেশ ঠেকাতে তারা বিভিন্ন মহলে তদবির করছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক বলেন, কয়েকজন চিকিৎসককে গ্রামের কর্মস্থলে বদলির পর তা স্থগিত করতে যেভাবে তদবির আসছে, তাতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। অনেকে হুমকির সুরে কথা বলছেন। প্রভাবশালীরা বুঝতে চান না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও এর পাশের হাসপাতালে অতিরিক্ত চিকিৎসক অবস্থান করছেন। তাদের বিভাগীয় শহর থেকে একটু দূরে উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হলেও তারা থাকতে চান না। লবিং-তদবির করে বিভাগীয় ও জেলা সদরে অবস্থান করেন।
পাঁচ জেলায় অতিরিক্ত ১৯৬ চিকিৎসক: রাজধানীতে অতিরিক্ত তিন শতাধিক চিকিৎসকের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতিরিক্ত ১৯৬ চিকিৎসক অবস্থান করছেন। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক পদ ৯টি। কিন্তু এসব জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্বিগুণেরও বেশি চিকিৎসক অবস্থান করছেন। অতিরিক্ত হিসেবে থাকা অনেক চিকিৎসক কর্মস্থলেও নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন না। নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৭ জন, নরসিংদীর পাঁচ উপজেলায় ৪১, মানিকগঞ্জের চার উপজেলায় ৩৯, গাজীপুরের পাঁচ উপজেলায় ৩৯ এবং মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় অতিরিক্ত ৩০ চিকিৎসক অবস্থান করছেন।
অতিরিক্ত চিকিৎসককে গ্রামে পাঠাতে না পারার ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব। তিনি বলেন, প্রায় দ্বিগুণ হারে অতিরিক্ত চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কীভাবে সংযুক্তি পেল আগে তা উদ্ঘাটন করা উচিত।