
ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম ডেক্স :
আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৮তম জাতীয় সম্মেলন। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। রোববার সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে নতুন নেতৃত্বের হাতে। এ নিয়েই এখন সারাদেশের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য।
সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শেষ করতে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাজ করতে দেখা গেছে কর্মীদের।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টিই আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঝে এখন একটিই প্রশ্ন, আগামী দিনে কোন দুইজনের কাঁধে যাচ্ছে শিক্ষা, শান্তি আর প্রগতির তিন তারকা খচিত সংগঠনের পতাকা বহনের দায়িত্ব। নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কারা আসছেন ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে? সকলেরই প্রত্যাশা ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে এবার আসবেন নিষ্কলুষ ভাবমূর্তির মেধাবী, আদর্শবান শিক্ষার্থীরা। সূত্র মতে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। সংগঠনে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে কোনো অবস্থায়ই যেন শিবির কর্মীরা সংগঠনের মধ্যে ঢুকে পড়তে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরীক্ষিত ও মেধাবীদের রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় নীতিনির্ধারকদের এমন নির্দেশনায় শিবিরের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রার্থীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের স্কুল-কলেজ জীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পারিবারিক বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। ছাত্রলীগের সম্ভাব্য নেতার মধ্যে যারা রয়েছেন তাদের পুরোভাগে চলে এসেছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কয়েকজন নেতাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাহিদুল ইসলাম শাহেদ ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান নাদিমের নাম দুই শীর্ষ পদে জোরালো আলোচনায় রয়েছে। নাদিম বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক এবং শাহেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য বিদায়ী কমিটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বেলায় বরাবরের মতো এবারও আঞ্চলিকতার প্রভাব পড়েছে।
সেই বিচারে বাদ যাচ্ছেন খুলনা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল, রংপুর এবং চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থীরা। এই চার বিভাগ থেকে সোহাগ-নাজমুল ও রিপন-রোটন পরপর দুই কমিটিতে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল বিভাগ ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে এবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই দৌড়ে নাদিম-শাহেদের পাশাপাশি আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মাদারীপুরের ছেলে সাইফুল ইসলাম সোহাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোরগঞ্জের মাহমুদুর রহমান জনি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি হুমায়ন ইসলাম সুমন এবং বুয়েট শাখার সভাপতি গোপালগঞ্জের ছেলে যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ্রজ্যোতি টিকাদার। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের আরও কয়েকজন ক্লিন ইমেজের ছাত্রনেতা শক্ত প্রার্থী হলেও মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে ছিটকে পড়তে যাচ্ছেন। তবে ছাত্রলীগে পরিপকস্ফ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যও কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনেরই একটি শক্তিশালী গ্রুপ। এই গ্রুপকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্পাদক পদমর্যাদার প্রায় অর্ধডজন নেতা। তাদের প্রত্যাশা, আগামী দিনের রাজনৈতিক মাঠের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনেও চমক সৃষ্টি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যোগ্যতা, দক্ষতা আর সততার দিক থেকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল এবং সমাজসেবা সম্পাদক কাজী এনায়েত বেশ এগিয়ে রয়েছেন। ৩২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল :এদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া ২৪২ প্রার্থীর মধ্যে ৩২ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন কমিশন গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের সময় তাদের মনোনয়ন বাতিল করেছে। এর মধ্যে বয়স চুরির অভিযোগে বাতিল হয়েছে তিন প্রার্থীর মনোনয়ন। তারা হচ্ছেন বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি সম্পাদক রাইসুল ইসলাম জুয়েল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য সাবেক সভাপতি এনায়েত হোসেন রেজা। ২০১১ সালের ১০ ও ১১ জুলাই হয়েছিল ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ সভাপতি এবং সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাধারণ সম্পাদক হন। পরে তাদের নেতৃত্বেই চার বছর ধরে চলেছে সংগঠনের কার্যক্রম। কিছু বিতর্ক ও সমালোচনা সত্ত্বেও সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার বেলায় বিদায়ী কমিটির অর্জনের পাল্লাই ভারী। তবে দুই বছর মেয়াদি এই কমিটি সম্মেলন করতে চার বছর সময় পার করে দেওয়ায় ক্ষোভও রয়েছে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে। ছাত্রলীগের শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন, সংগঠনের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও নিজেদের মধ্যে হানাহানির ঘটনায় ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন থেকে ভাবমূর্তির সংকটে রয়েছে। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে সরকারের অনেক উজ্জ্বল অর্জন ম্লান হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। আগামীতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যারা আসবেন তাদের প্রথম কাজই হবে ইমেজ সংকট থেকে সংগঠনকে উদ্ধার।—-সুত্র সমকার অনলাইন