
অনলাইন ডেস্ক ::
দলীয় আনুগত্য ও ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘৩০ ডিসেম্বর জনগণকে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। কোনো ধরনের হুমকি এলে জনগণকে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবেলা করতে হবে।’
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোটের দিন সকালে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, দেশের মানুষ অবাধ নির্বাচন চায়। এটা সরকারের অনুকম্পার বিষয় নয়, সংবিধান এটা নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে যেসব আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তা তুলে ধরতে হবে গণমাধ্যমকে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্র্রেফতার বন্ধে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। প্রতিদিন পাইকারি হারে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেই গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে।
গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘জনগণ হলো ক্ষমতার মালিক— ১৬ কোটি মানুষের কাছে এ তথ্য তুলে ধরুন। তাহলে জনগণ যে রাষ্ট্রের মালিক, তা অনুধাবন করতে পারবে। জনগণ সক্রিয়ভাবে দেশ পরিচালনা করবে।’
যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখেছি— জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে সবকিছুই সম্ভব। নির্বাচনের সময় ফটো বা ভিডিও করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশন আইন করেছে, সেটা বাতিল করা না হলে আদালতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানে যে সাম্যের রাজনীতির কথা বলা হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। সংবিধানেই লেখা আছে সেই রাজনীতির কথা। এখানে নতুন ধারার কোনো রাজনীতি চালুর দরকার নেই। সংবিধান মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করলেই প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করা যাবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা জোরালোভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি তা বাতিল করে দিলেন। আদালতের রায়েও বলা আছে, আরো দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে। জনগণের আস্থা পেয়ে তারা সরকারে গেলে সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালিত করা হবে বলেও জানান প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করার জন্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। কিন্তু প্রতিদিন প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা যেন বাস্তবায়ন করা হয়। তা না হলে বৃহত্তর কঠোর কর্মসুচিতে যেতে বাধ্য হবো।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ড. কামাল হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ দেশ ও সরকারের ওপর তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে। নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্যফ্রন্টের সব দলই এই ব্যাপারে সচেতন। যাচাই বাছাইয়ের পর দেশের সব আসনেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী নির্ধারিত হবে।’
ভোট পাহারায় জনসাধারণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, সেটা পাহারা দিতে হবে। এখানে আমরাও বলছি, পত্র-পত্রিকায় সবাই আশঙ্কা করছেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে নানাভাবে বাধা দেয়া হবে। সেই বাধাগুলো সরকার বা যে কেউ দিক না কেন, বাধা দিলে আমাদের সবাই মিলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে রক্ষা করতে হবে। আগামী ২৮ দিন গণমাধ্যমের সহযোগিতা দরকার।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আমি দেশবাসীর প্রতি ১৯৭১ সালের মতো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অপরিহার্য অংশ। যদি জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বই হুমকির মুখে পড়বে।’
তিনি আহ্বান রেখে বলেন, ‘দেশের সমস্ত জনগণ ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ করবো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমার আহ্বান তারা যেন নিরপেক্ষভাবে, স্বাধীনভাবে এবং ভয়-ভীতির ঊর্ধ্ব উঠে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ সব কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান— আপনারা দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। পোলিং এজেন্টরা যাতে নির্ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করুন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যেদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, বিএনপির আবদুস সালাম, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা এসএএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।