
নাজমুল হক :
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বল্লী ও লাবসা ইউনিয়নের ১৩টি বিলের অন্তত ২৫ হাজার বিঘা কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মৎস্য ঘেরের লোনা পানি উত্তোলন, অতি বর্ষণ, পানি নিষ্কাশানের পথ না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিতে যাচ্ছে ১৩টি বিল। গত ১৫ দিন ধরে প্রতিটি বিলের কানায় কানায় পানি ভরে গেলেও পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। পানি না কমায় কৃষকের আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা, পাট নষ্ট হয়েছে। কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে গ্রামের ভিতর পানি ঢুকছে। কৃষকরা জানায়, চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করতে না পারলে তাদের পথে বসতে হবে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরুতে সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙ্গা, কুন্দুরানীসহ কয়েকটি স্লুইচ গেট দিয়ে মৎস্য ঘেরে লোনা পানি উঠানো হয়। এ পানি বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে প্রবেশ করে। সম্প্রতি বৃষ্টির পানি এ পানির সাথে যোগ হওয়ায় তিন ইউনিয়নের প্রত্যেকটি বিলে কানায় কানায় টইটম্বুর হতে থাকে।
সূত্র আরো জানায়, ঝাউডাঙ্গা, বল্লী ও লাবসার বিলগুলো একে অন্যের সাথে সংযুক্ত। ঝাউডাঙ্গা ও বল্লী ইউনিয়নের কয়েকটি বিলের পানি লাবসা ইউনিয়ন হয়ে প্রাণ সায়ের ও বেতনায় পড়ে। কিন্তু লাবসা ইউনিয়নের কয়েকটি স্লুইচ গেটের পাখা ভাঙ্গা থাকায় পানি হু হু করে পর্যাপ্ত পরিমানে বিলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডও কোন ভুমিকা পালন না করায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
সরেজমিনে লাবসা, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকটি বিলে গিয়ে দেখা যায়, লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙ্গি, রাজনগর, শিবনগর, গোপিনাথপুর, তালতলা, বল্লী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর, হাজীপুর, রায়পুর এবং ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া, দেবনগর, দত্তবাগ, বলাডাঙ্গা, উত্তর মাঠ বিলে পানি কানায় কানায় ভরে গেছে। প্রত্যেটি বলে মানুসের গলা সমান পানি রয়েছে। বিলে পানি দিন দিন বাড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান। লাবসার রাজনগর মাদ্রাসার সামনের রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার মাঠে হাঁটু পানি বিরাজ করছে। এ গ্রামের একাধিক বাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠে গেছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য এমদাদুল হক জানান। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন জানান, বেতনা নদীর নাব্যতা না থাকায় পানি টানছে না। মাঠের থেকে নদীর পারি আরো বেশি। লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জানান, ইউনিয়নের কয়েকটি স্লুইচ গেট দিয়ে পানি ঢুকছে। আমরা কয়েকটি নিজ উদ্যোগে বন্ধ করেছি। স্লুঁইচ গেট দিয়ে পানি বন্ধ করা না হলে বিভিন্ন গ্রাম তলিয়ে যেত। তিনি আরো জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী কাটলেও শ্যাল্যে থেকে কুল্লা পর্যন্ত নদী কাটেনি। ফলে নদী দিয়ে পানি টানছে না। তিনি আরো বলেন, বিলে পানি থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিতে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রত্যেটি বিলের কানায় কানায় পানি থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কান কার্যক্রম করছে না। তিনি আরো জানান, তার ইউনিয়নে কয়েকটি বিলে অন্তত ৭ হাজার বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে আছে।
অন্যদিকে, বল্লী ইউনিয়নের কয়েকটি বিলের কানায় কানায় পানি পরিপূর্ণ হয়ে আছে। মুকুন্দপুর গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। এ গ্রামের মো. আব্দুল্লাহ জানান, পানিতে তাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা মৎস্য ঘের করার কারণে বিলের পানি বাহিরে যেতে পারছে না। তিনি আরো জানান, বিলের খালের প্রবেশ মুখে মৎস্য ঘের করা হয়েছে। ফলে যারা ঘের করে নি তাদের জমির পানি সরার কোন ব্যবস্থা নেই।
তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকটি বিল। ইউনিয়নের মধ্যে আখড়াখোলা আউডিয়াল কলেজের আঙ্গিনায় কোমর পানি বিরাজ করছে। দত্তবাগ গ্রামের একটি বাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠে গেছে। দত্তবাগ-আখড়াখোলা, দত্তবাগ-দেবনগর রাস্তার উপর নিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের প্রতিটি বিলের কানায় কানায় পানি ভর্তি হয়ে আছে। ইউনিয়নের কয়েকটি বিলের তীরবর্তী বাড়িতে পানি উঠেছে। পানি কমছে না। পানি যেন স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিতে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, লাবসার কিছু ঘের মালিকের কারণে আমাদের প্রতি বছর ডুবে থাকতে হয়। তারা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে মৎস্য ঘেরে লোনা পানি উত্তোলন করে। যা ঝাউডাঙ্গা-বল্লী ইউনিয়নের বিলগুলোতে আসে। বর্ষার আগেই এক রাতে জোয়ারের নদীর পানিতে বিলে হাঁটু পানি পর্যন্ত উঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি বলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আসাদুজ্জামান বাবু জানান, তিনটি ইউনিয়নের জলাবদ্ধতার বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। দ্রুত সমাধান করা হবে। তবে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক জানান, ড্রেজার দিয়ে নদী কাটার কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত পানি নেমে যাবে। তিনি আরো বলেন, বেতনা নদীর তীরে লোনা পানি উত্তোলন না করলে জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে। তিনি আরো জানান, বিগত দিনে বর্ষার কারণে নদী ড্রেজার দিয়ে কাটা সম্ভব হয়নি। বেতনার তীরে রেগুলেটর সিস্টেম করলে সদর উপজেলায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। তবে তার জন্য কয়েকবছর অপেক্ষা করতে হবে। ভুক্তভোগীরা জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।