
গাজী আব্দুল কুদ্দুস ডুমুরিয়া :
ডুমুরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন আর কয়েকটি নদীর জোয়ারের পানিতে ডুমুরিয়ার বিস্তৃর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভদ্রা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ গত ২৪ ঘন্টায় ভেঙ্গেছে আরও ৩ গুন। শুক্রবার যেখানে বাঁধ ভেঙ্গেছিল ৫০ ফুট সেখানে ওই দিন রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত আরও ১৫০ ফুট বেড়ি বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ২০/২৫ টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। সে সব গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। উপজেলা সদর সহ ৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ আতংক গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তেলিগাতী ঘ্যাঙ্গরাইল নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৩ ইঞ্চি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জোয়ারের পানি,বাঁধের গোগা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে গ্রামে। আতংকিত হয়ে পড়েছে একটি গ্রামের মানুষ,যে কোন বাঁধ ভেঙ্গে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। উল্লেখ্য শুক্রবার বিকালে উপজেলার ২৯ নং পোল্ডারের বুড়িভদ্রা নদীর চাঁদগড়-জালিয়াখালী ৫০ ফুট বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় হু হু করে পানি ঢুকে পড়ে কয়েকটি গ্রামে। এ ঘটনায় ডুমুরিয়া সদর,ভান্ডারপাড়া,সাহস,শরাফপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে। তাৎক্ষনিক ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে ৫০০ শ্রমিককে বাঁধ মেরামতের কাজে লাগানো হলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। শুক্রবার রাতের জোয়ারের পানি আর শনিবারের প্রবল বর্ষনে নদীর স্রোতও হয় প্রবল। এতে শনিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরও ১৫০ ফুটের মত বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এখন পানির প্রবল স্রোতে বাঁধ মেরামতের কাজও করা যাচ্ছেনা। শনিবার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সামছূদ্দৌজা বলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। বৃষ্টি না থামলে কোন ভাবেই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হবেনা। তবে বাঁধ মেরামতের জন্যে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা এবং খুলনা জেলা পরিষদেও পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ৫ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার । এ দিকে তেলিগাতী ঘ্যাঙ্গরাইল নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের অবস্থাও আশংকাজনক বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। সেখানে বাঁধের মাত্র ৩ ইঞ্চি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জোয়ারের পানি,বাঁধের গোগা দিয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে শোভনা ইউনিয়নের বাগআচঁড়া গ্রামের মধ্যে। এই অবস্থায় ওই গোগা বন্ধ করাও সম্ভব নয়।
আর গোগা বন্ধ না হলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়বে শোভনা ইউনিয়নের বাগআচঁড়া,আটলিয়া ইউনিয়নের বয়ারশিং, মনোহরপুর,নিচুখালী,কুলবাড়িয়া,সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে।
এ ঘটনা ঘটলে গৃহ হারা হয়ে পড়বে কয়েকশ পরিবার। আটলিয়া ইউনিয়নে গোবিন্দকাঠী গ্রাম সংলগ্ন ভদ্রা নদীর বাঁধের উপর দিয়ে পানি ঢুকে কয়েক হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে,পানিতে ভেসে গেছে কয়েকশ একর মৎস্য ঘের। আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ বদরুজ্জামান তসলিম বলেন শুক্রবার গোবিন্দকাঠী গ্রামের কাঁঠালতলা মঠের পিছন দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে তাৎক্ষনিক ভাবে সেখানে বাশেঁর পাইলিং ও মাটি দিয়ে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ উচুঁ করা হয়। এর ফলে বড় ধরনের কোন বিপদ হয়নি। তবে আরও আরও দুই এক দিন যদি ভারী বর্ষণ এবং নদীতে প্রবল স্রোত অব্যাহত থাকে তাহলে শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হয়না। শনিবার বিকালে গোবিন্দকাঠীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর। এ সময় তার সাথে ছিলেন আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ বদরুজ্জামান তসলিম ও খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল হোসেন দিদার। খুলনা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বলেন আমরা স্বার্বক্ষনিক সবকিছু মনিটরিং করছি। চাঁদগড়-জালিয়াখালী এলাকা ছাড়া এখনও বড় ধরনের কোন সমস্যা কোথাও হয়নি তবে বৃষ্টি যেহেতু বন্ধ হয়নি সেহেতু আরও কয়েকটি স্থানে সমস্যা হতে পারে বলে আমাদের আশংকা রয়েছে। এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে সার্বক্ষণিক সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। তেমন কিছু হলে উপজেলা প্রশাসন জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।