
সোমবার কালনা সেতু উদ্বোধন
ডেস্ক রিপোর্ট ::
ঢাকার সাথে সাতক্ষীরা দূরত্ব আরও কমে আসছে। আগামী ১০ অক্টোবর নড়াইলের মধুমতি নদীর উপর নির্মিত কালনা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-সাতক্ষীরার দূরত্ব কমবে প্রায় ৩০ কি.মি.। তবে, যশোর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রশস্থ সড়ক না থাকায় কালনা সেতুর সুফল পেতে আরও প্রায় ৫ বছর অপেক্ষা লাগতে পারে।
এজন্য ২ লেনের ভাঙ্গা-বেনাপোলের ১২৯কি. মি. সড়ককে ৪ লেনের মহাসড়কে রূপান্তরিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা অনেক আগেই তৈরি করা হয়েছিল। তবে অর্থায়নসহ কিছু অনিশ্চয়তার কারণে এ প্রকল্পে অগ্রগতি সামান্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২টি পৃথক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করেছে। একটি জমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের জন্য এবং অপরটি ভৌত কাজের জন্য। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা (ডলার প্রতি ৮৯ টাকা হিসেবে)।
তবে প্রকল্পগুলো কবে অনুমোদন পাবে এবং কবে কাজ শুরু হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। কারণ প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সংশ্লিষ্ট নথির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রকল্পের অনুমোদন পেলেও ভূমি অধিগ্রহণে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে এবং মূল প্রকল্পের কাজ ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলবে।
চলমান এ পরিস্থিতিতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য সড়ক যোগাযোগ ও আন্ত:সীমান্ত সংযোগ মসৃণ করা এখনই সম্ভব হবে না।
গত জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘতম এ সেতুর কারণে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সাতক্ষীরা থেকে গোপালগঞ্জ-খুলনা হয়ে ঢাকার দুরুত্ব কমে হয়েছে প্রায় ২৬০কি. মি.। কালনা সেতু চালু হওয়ার পর সাতক্ষীরা থেকে যশোর-নড়াইল হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে প্রায় ২৩০কি.মি.। ভবিষ্যতে সাতক্ষীরা-চুকনগর হয়ে যশোরের রাজারহাট দিয়ে উন্নত সড়ক নিশ্চিত হলে দূরত্ব আরো কমে যাবে।
এই সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ে-১ প্রকল্পের অন্যতম মূল উপাংশ, যা এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে এবং এই অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তামাবিল-সিলেট-ঢাকা-নড়াইল-যশোর হয়ে মেঘালয়কে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এ সংযোগ স্থাপনে দুটি পয়েন্ট অনুপস্থিত ছিল। যার মধ্যে একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু এবং অপরটি কালনা সেতু, যা নড়াইলে মধুমতী সেতু নামে পরিচিত।
এদিকে ঢাকা থেকে সিলেট এবং সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত ২ লেনের মহাসড়ককে ৪ লেনে রূপান্তরিত করতে সরকার ইতোমধ্যে ২টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সম্প্রসারণ এ বছর এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সম্প্রসারণ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কটি ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তর করা হয়েছে।
তবে ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল যাওয়ার রাস্তাটি ২ লেনের মহাসড়ক। পথিমধ্যে নড়াইলের মধুমতী নদীর কালনা পয়েন্টে ফেরি টার্মিনাল রয়েছে।
তাই বেনাপোল, যশোর, ঝিনাইদহসহ সাতক্ষীরাগামী অনেক যানবাহন ফেরি রুট এড়িয়ে ভাঙ্গা-ফরিদপুর-মাগুরা সড়ক ধরে এবং কিছু যানবাহন ফেরি ব্যবহার করে।
কালনা পয়েন্টে মধুমতী সেতু চালু হলে ভাঙ্গা ও বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এর ফলে সীমান্ত বাণিজ্যসহ যান চলাচলের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বেশিরভাগ যানবাহনই ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক ব্যবহার করবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা থেকে গাবতলী-পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-মাগুরা হয়ে যশোরের দূরত্ব ২১৮ কিলোমিটার। আর যাত্রাবাড়ী-পদ্মা সেতু-মধুমতী সেতু হয়ে গেলে এর দূরত্ব হবে ১৬০ কিলোমিটার এবং সাতক্ষীরার দুরত্ব হবে ২৩০ কি.মি.।