তালার জেঠুয়ায় নকশা বহির্ভূত কপোতাক্ষ নদ খনন করার অভিযোগ


460 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
তালার জেঠুয়ায় নকশা বহির্ভূত কপোতাক্ষ নদ খনন করার অভিযোগ
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬ তালা ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

বি. এম. জুলফিকার রায়হান,  তালা :
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেঠুয়া ও কৃষ্ণকাঠী এলাকায় চলমান কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে খনন কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে তালা ও পাইকগাছা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের জেঠুয়া অংশ প্রকল্প’র নকশা বাদ দিয়ে নদ খনন করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, পাশ্ববর্তি প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ী নির্মল ঠাকুরকে এই এলাকার নদ ও নদ ভরাটি খাস জমি দখল করিয়ে দিতেই একটি মহল এধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

তাদের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে একদিকে সরকারে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে, অপরদিকে ভূমিহীনদের তাড়িয়ে দিয়ে প্রবাহমান নদ ও নদ ভরাটি খাস জমি দখল নিয়ে সেখানে মৎস্য ঘের তৈরি হবে। একসময়কার দূর্ধষ চরমপন্থী ক্যাডার নির্মল ঠাকুর কপোতাক্ষ নদ সহ নদ ভরাটি ৮০০ বিঘা খাস জমিতে ঘের করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে সে বর্তমানে চলমান কপোতাক্ষ নদের এবং নদ ভরাটি খাস জমির কথিত মালিকদের কাছ থেকে ৫ বছর মেয়াদী একটি ডিড করে নিয়েছে। কপিলমুনি বাজারের মজনু মোহরারের মাধ্যমে নির্মল ঠাকুর এই ডিড করেছে। এঘটনা প্রকাশ পবার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে বসবাসরত ৮টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ৫ শতাধিক পরিবারের প্রায় ৩ হাজার মানুষ।

দরিদ্র ও হতদরিদ্র এই পরিবারগুলো সরকারের কাছ থেকে তালা উপজেলার জেঠুয়া, কৃষ্ণকাটি, চর কানাইদিয়া এবং পাইকগাছা উপজেলার রহিমপুর, হরিদাশকাটি ও ডেয়ারা মৌজায় খাস জমি বিধি মোতাবেক স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে বসতবাড়ি স্থাপন করে। এছাড়া ১৭০ টি সেচ পাম্প স্থাপন করে দীর্ঘ ৪০/৪৫ বছর যাবৎ এখানে চাষাবাদ করছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ নির্মল ঠাকুরের ঘের ব্যবসার স্বার্থে ভূমিহীনদের বসত বাড়ি, ফসলী ক্ষেত ও রাস্তা উচ্ছেদ করে জমি কেটে নদ খনন করার পদক্ষেপ নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দরিদ্র মানুষগুলো। ক্ষুব্ধ ভূমিহীনরা নদ খননে অনিয়ম ও তাদের বসতবাড়ি উচ্ছেদ করে কৃষি জমির উপর দিয়ে নদ খনন করার প্রতিবাদে এবং প্রকল্প নকশা অনুযায়ী কপোতাক্ষ নদ খননের দাবীতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। যে কারনে চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী নির্মল ঠাকুরের আগ্রাসন রুখতে ইতোমধ্যে ভূমিহীনরা উচ্চ আদালতে একটি রীট মামলা দায়ের করেছেন।

উপজেলার জেঠুয়া, কৃষ্ণকাঠি বিলের ওয়াপদা রাস্তার পাশে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর মোড়ল (৬৫), কাশেম শেখ (৭০), কামরুল শেখ (৫৫), মুনছুর আলী মোড়ল (৬০), জামিলা বেগম (৬০), ভানু বিবি (৬৫) ও আরতি রানী (৫৫) সহ শতাধীক ভুমিহীন জানান, তারা সরকারের কাছ থেকে বিধি মোতাবেক খাস জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে বসতবাড়ি স্থাপনসহ দীর্ঘ ৪০/৪৫ বছর যাবৎ চাষাবাদ করে আসছে। ইতোমধ্যে ভোগদখলীয় সম্পত্তি খতিয়ান পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে ভূমিহীনদের নামে ব্যক্তি মালিকানার খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে। তারা আরও জানায়, উক্ত জমি বন্দবস্তের পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল ভূমিহীনদের বিভিন্ন হয়রানী করে আসছে। এমনকি মহলটি ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে জমি দখলে ব্যার্থ হয়ে এসিড হামলা পর্যন্ত চালিয়েছে। বছরের পর বছর এধরনের হামলা, মামলা ও হুমকি দিয়ে ভূমিহীনদের এখান থেকে তাড়াতে পারেনি ভূমিদস্যু মহলটি। দীর্ঘ প্রচেষ্টা ব্যার্থ হবার পর অবশেষে ভূমিদস্যুদের সুযোগ আসে চলমান কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে। ভূমিদস্য ও চরমপন্থী ক্যাডার নির্মল ঠাকুর কৌশলে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প’র নকশা পরিবর্তন করিয়ে এসএ ম্যাপ অনুযায়ী নদ খনন করাচ্ছে। নকশা বহির্ভূত ভাবে জেঠূয়া-কৃষ্ণকাঠি এলাকায় নদ খনন হলে ভূমিহীন পরিবারগুলো পথে উঠবে। আর চলমান কপোতাক্ষ নদ সহ নদ ভরাটি ৮০০ বিঘা জমি অবৈধ দখল নিয়ে সেখানে মৎস্য ঘের তৈরি করবে নির্মল ঠাকুর। অপরদিকে নকশা বহির্ভূত ভাবে কপোতাক্ষ নদ খনন করায় প্রায় ৪ কিলোমিটার নদ খনন না করে বরাদ্দকৃত কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ পাবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সহ কর্তৃপক্ষ। একারনে অবিলম্বে, নকশা বহির্ভূত কপোতাক্ষ নদ খনন বন্ধ করে নকশা অনুযায়ী চলমান কপোতাক্ষ নদ খননের দাবী জানিয়েঞে আতংকিত ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রবাহমান নদী এবং নদী ভরাটি জমি সরকারের সম্পদ। এখানে কেহ অবৈধ দখল নিয়ে মাছ চাষ করতে আসলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সরজমিনে জেঠুয়া-কৃষ্ণকাঠির ওয়াপদা বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। তবে, জানতে চাইলে মৎস্য ঘের করার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে নির্মল মজুমদার ওরফে নির্মল ঠাকুর পরবর্তিতে- শরীকদের কাছ থেকে কিছু জমি ডিড নেয়ার কথা স্বীকার করেন।