
বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা :
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সুজনশাহা বাজারের সেলুনি ব্যবসায়ীরা সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ জনগোষ্ঠির সাথে চরম বৈষম্য মূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সেলুনি ব্যবসায়ীরা অন্ত্যজ জনগোষ্ঠির মানুষের চুল, দাড়ি কাটাতে চায়না। এনিয়ে অন্ত্যজরা বেশ ক্ষুব্ধ।
জানাগেছে, তালা উপজেলার সুজনশাহা বাজারের সেলুন মালিকরা বছরে পর বছর ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া রিশি বা সমগোত্রীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের চুল বা দাড়ি কাটানো থেকে বিরত রয়েছে। তারা নিম্ম বর্ণের মানুষ, তাই তাদের চুল, দাড়ি কাটানো হচ্ছে না।
তালা ঘোনা রিশি পাড়ার সাধনা লোক কেন্দ্র’র সভাপতি সুমিত্রা দাস, সাধারন সম্পাদক রুমা বেগম, সংগঠনের নেত্রী কাজল দাস ও জুলেখা বেগম জানান, তাঁরা সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষ। একারনে তথাকথিত উচ্চ বর্নের হিন্দুদের চাঁপের মুখে সুজনশাহা বাজারের সেলুনি মালিকরা অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষের চুল বা দাড়ি কাটেনা। তারা ্বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর তাদের পাড়ার ৯ জন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র সুজনশাহা বাজারে চুল কাটাতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বিষয়টি কেন্দ্রীয় অন্ত্যজ পরিষদকে জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় অন্ত্যজ পরিষদ তদন্ত করে বৈষম্যমূলক আচরণের সত্যতা পান। এবিষয়ে কেন্দ্রীয় অন্ত্যজ পরিষদের সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, সুজনশাহা বাজারের সেলুনি মালিকরা বছরের পর বছর অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে চরম বৈষম্য মূলক আচলণ করছে।
ঘোনা গ্রামের শম্ভু দাসের পুত্র ও খুলনা বিএল কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মিল্টন দাস ও একই গ্রামের নারান দাসের পুত্র স্কুল ছাত্র পিতর দাস, গোবিন্দ দাসের পুত্র স্কুল ছাত্র সুদেব দাস সহ একাধিক ভুক্তভোগী ছাত্র জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁরা ৯ জন একত্রে প্রায় ২/৩ কিলোমিটার দুরে সুজনশাহা বাজারে চুল কাটতে যান। কিন্তু তাঁরা নিম্ন বর্নের মানুষ হওয়ায় তপন’র সেলুন, বাসুদেব’র সেলুন এবং জয়দেব কুমার পঁচাসহ সব ক’টি সেলুন মালিক তাদের চুল কাটাতে অস্বীকৃতি জানায়।
অন্ত্যজ স¤পদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা তালার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভূমিজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অচিন্ত্য সাহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সুজনশাহা বাজারে সেলুনি ব্যবসায়ীরা এধরনের বৈষম্য দীর্ঘ দিন ধরে করে যাচ্ছে। এ ধরণের আচরণ খুবই দু:খজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, নিম্ম বা উচ্চ সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে চুল বা দাড়ি কাটা বা না কাটার ঘটনাটি দু:খজনক।
সেলুনি ব্যবসায়ীদের সকল মানুষের চুল বা দাড়ি কাটা উচিত। যদি কোনও সেলুনি মালিক চুল বা দাড়ি কাটাতে না চায়, তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।