
এস,এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট :
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেওদক্ষিণাঞ্চলের মংলা-খুলনা বাসীর স্বপ্নের বিমান বন্দরের কোন অগ্রগতি নেই। খোলা আকাশের নীচে প্রায় ১০কোটি টাকার যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় বিমান বন্দরের প্রথম উদ্যোগটি নেয়া হয় ১৯৬১সালে। তখন মশিয়ালী নামক স্থানে বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়।কিন্তু পরিকল্পনাটিও আলোরমুখ দেখেনি। ১৯৮০সালে দিকে বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য বাগেরহাট জেলাধীন ফকিরহাট থানার কাটাখালীতে স্থান নির্বাচন করা হয়। অজ্ঞাত কারণে সেই পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে যায়। ১৯৯২সালে বিমান বন্দর ইস্যুটি আবার জোরদার হয়ে উঠলে তৎকালীন বিএনপি সরকারও তৎপর হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে মংলার পার্শবর্তী এলাকার ফয়লা নামক স্থানে স্টল বিমান বন্দর স্থাপনের জন্য ৯৫একর ফসলী জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে আরও কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমান জমির মোট পরিমাণ ১০৪একর। ৯৬সালের জুন মাসে ওই জমি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।১৯৯৬সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে খুলনা-মংলাবাসীর প্রাণের দাবি বিমান বন্দর স্থাপন প্রকল্পটি বহাল রাখে । ১৯৯৮ সালে জুন মাসে প্রস্তাবিত খানজাহান আলী বিমান বন্দররের জন্য অধিগ্রহনকৃত জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। সেই সময়ে যতটুকু ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছিল তারপর আর কোন কাজ হয়নি। বিগত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিমান বন্দর নির্মানের পূর্ব পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে। স্টল বিমান বন্দর নির্মাণের পরিবর্তে মাঝারি ধরণের বিমান ওঠানামার উপযোগী বিমান বন্দর নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য আগের অধিগ্রহণ করা জমির পাশে জনবসতি এলাকার আরো ৭১ দশমিক ৮২একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহন করা হয় নি।বিমান বন্দর প্রকল্পের সাব এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার জানান- প্রায় দেড় যুগ আগে বিমান বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে প্রস্তাবিত বিমান বন্দরটিতে ৪হাজার ফুট একটি রানওয়ে রয়েছে। যাতে বালি ও মাটি দিয়ে বরাট করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে যে সব যন্ত্রপাতি আনা হয়ে ছিল , তার মূল্য প্রায় দশ কোটি টাকা যা ওখানে পড়ে থেকে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বাগেরহাটের সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতৃবৃন্দ ফয়লায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এ অঞ্চলের মানুষ মনে করে পদ্মার এ পারে দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার পাশে ফয়লায় বিমান বন্দর নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নে স্বর্ণযুগের যেমন শুভ সূচনা হবে, তেমনি এ অঞ্চলের মাটি মানুষের হৃদয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম স্থায়ী আসন অলংকৃত করবে। সাথে সাথে নতুন করে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ, জনসমর্থন, সমীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকান্ডের খুব বেশি প্রয়োজন পড়বে না। ঘটবে না আড়িয়ল বিলের মতো বিয়োগাত্মক ঘটনা। সর্বোপরি এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদ্মায় মাওয়া সেতু নির্মাণ, মংলা বন্দরের উন্নয়ন, রামপালে নতুন বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, সুন্দরবনে বিদেশী পর্যটক বৃদ্ধিসহ যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা কার্যকর হতে সহায়ক হবে।মহাজোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে মংলা বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব অনেক কমে যাবে। এছাড়া বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে এ অঞ্চলে ব্যাপক কল-কারখানা গড়ে উঠবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এছাড়া সুন্দরবন ঘিরে গড়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্র। বিদেশী পর্যটকদের ব্যাপক আগমন ঘটবে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে ফয়লায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণ আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান। উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা, জাতীয় পার্টির নগর সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মজিবর রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ খুলনা নগর সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকন ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন, ন্যাপের নগর সভাপতি ফজলুর রহমান, ওয়াকার্স পার্টি নেতা রফিকুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মার এপাড়ে বিমান বন্দর নির্মাণের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, পদ্মার এপাড়ে ফয়লায় খানজাহান আলী বিমান বন্দরই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের জন্য উপযুক্ত। কেননা এখানে জমি অধিগ্রহণ করা রয়েছে। জরিপের ইতিবাচক রিপোর্টও আছে। লোকও নিয়োগ করা রয়েছে। একটি বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য প্রাথমিক সকল কর্মকান্ড শেষ হয়েছে, রয়েছে জনসমর্থনও। খুলনা বাগেরহাটের মানুষ আন্তরিকভাবে বিমান বন্দরের জন্য প্রস্তুত। শুধুমাত্র বর্তমান জমির সাথে আরও কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তাতে সমস্যা হবে না। এলাকার মানুষ বিমান বন্দরের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে জমি অধিগ্রহণ করতে দেবে।তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চলেল উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা কার্যকর করতেও খানজাহান আলী বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে খানজাহান আলী বিমান বন্দরের জন্য ২৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত নির্মাণের কাজও শুরু হবে। এটিকে আঞ্চলিক বিমান বন্দর না করে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে তিনি শ্রদ্ধার পাত্রী হিসেবে থাকবেন। অপরদিকে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে বিষয়ে আন্তরিক। এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তিনি মাওয়া সেতু নির্মাণ, মংলা বন্দরের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন, সুন্দরবন বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করতে নিয়েছেন নানান পরিকল্পনা। সাথে খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণের বিষয়েও আন্তরিক। তবে খানজাহান আলী বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তা নির্মাণ করলে এ অঞ্চলের উন্নয়নে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে। জেলা আ’লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকান্ডের প্রমাণিত হয় তিনি দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নে আন্তরিক। খুব দ্রুত থোক বরাদ্দ দিয়ে খানজাহান আলী বিমান বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তবে এই সাথে বিমান বন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ঘোষণা দিলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি তার ভালবাসা চির জাগ্রত হিসেবে থাকবে।