
সোহরাব হোসেন সবুজ, নলতা :
বর্তমান সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ও সাফল্য দেখা গেলেও এখনও ফ্যাশন মুখী শিক্ষা ব্যবস্থার থেকে সরে আসেননি অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকবৃন্দ। একটি ইউনিয়নের মধ্যে ৫-৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে কেজি স্কুলের সংখ্যা দেখা যায় ৮-১০ টি। যাচাই বাছাই করে এসব স্কুলগুলোতে মেধাবী এবং অর্থবান ছাত্র/ছাত্রীদেরকে ভর্তি করা হয়। আর সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায়ে শিশুদের পড়াশুনা করানো এখন ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। অথচ বর্তমান সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকার যে আধুনিকায়ন করেছে, বিনা বেতনে পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছে, লেখাপড়ার দিকে ছাত্র/ছাত্রীদের মনোযোগী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেদিকে কেজি স্কুল মুখী ঐসব অভিভাবরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভাবেন না। কিন্তু সহায় সম্বলহীন, খেটে খাওয়া দিন মজুর, অর্ধহারে অনাহারে থাকা সন্তান এবং সাধারন পরিবারের সন্তানেরাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনাবেতনে পড়াশুনা করে তো ঠিকই তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, মানুষের মত মানুষ হয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌছাচ্ছে।
আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসকল আধুনিকায়ন ও সার্বিক সাফল্যের দিক থেকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ৭৪ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন দেশের দক্ষিণ বঙ্গের স্বপ্নের স্কুলে পরিনত হতে চলেছে। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সংস্কারক, ব্রিটিশ শাসনামলের শিক্ষা বিভাগের সহ-পরিচালক, সুলতানুল আওলিয়া কুতুবুল আকতাব গওছে জামান আরেফ বিল্লাহ শাহছুফি আলহাজ্ব হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রঃ) এর পূণ্যভূমি নলতা শরীফে অবস্থিত এই প্রাইমারি স্কুলটি। সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক (এমপি)সহ বহু গুণী মানুষ ছিলেন এ প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। আজও এ স্কুলটি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে, ছাত্র গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে অবিস্বরণীয়ভাবে।
জানা যায়, বর্তমান স্কুলে শিক্ষাদানে ১৭ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন, আর ছাত্র-ছাত্রী আছে ৭ শত ৮৪ জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ারুল হক ৪ বার জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। স্কুলের শিক্ষকবৃন্দসহ সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা ফলাফলে ৪-৫ বার জেলার শ্রেষ্ঠ এবং ২০১৪ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কোন কোন বছর ২০, ২৫ থেকে ৩০ জন পর্যন্ত এখান থেকে বৃত্তি পেয়েছে। এসব সাফল্যের পিছনে বড় মজার বিষয় হল, দিনে রাতে শিক্ষকদের আন্তরিকতায় ফ্রি কোচিং ক্লাস! কারন- তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ শিক্ষাদান কার্যক্রম তাদের কাছে নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল ক্যাম্পাসটা শিক্ষকদের কাছে বাড়ীর মত। ৪র্থ, ৫ম ও ৮ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের দিনে রাতে চলে ফ্রি কোচিং ক্লাস। তাদেরকে বাইরের কোন শিক্ষকের কাছে কোচিং করে পড়াশুনার পিছনে অর্থ ব্যায় করতে দেওয়া হয় না। বিনোদনের জন্য স্কুলে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, কম্পিউটার, হারমোনিয়ম, তবলা, পিয়ানোসহ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক সরকারি জিনিষপত্র অনুদান হিসেবে এ স্কুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারিসহ স্কুলটির সার্বিক মনোরম পরিবেশ চোখে পড়ার মত। পড়াশুনার যাতে ব্যঘাত না ঘটে সেজন্য সার্বক্ষনিক বিদ্যুতের পাশাপাশি জেনারেটর, সোলারসহ ৩ পদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির তদারকিও থাকে নিয়মিত। কমিটির সভাপতি নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সফল প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুস প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে স্কুল পরিদর্শন করে খোজ খবর নেন বলে জানা যায়। আরো বেশি মজার বিষয় হল, স্কুলের সার্বিক সাফল্যের দিকে খুশি হয়ে স্থানীয় লোকজন তাদের অর্থ দিয়ে স্কুলের ভবন নির্মাণ করে মহানুভবতা দেখিয়েছেন। বিগত সময়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্থানীয়রা ভবন নির্মাণ করেছেন এবং বর্তমানে নলতার কৃতি সন্তান আলহাজ্ব মাহফুজুল হক ব্যক্তিগতভাবে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্কুলের ২য় তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। সাথে সাথে স্কুলটি আরো বেশি আধুনিকায়ক করার জন্য, স্কুলের প্রতি সু-দৃষ্টি দিয়ে যদি আরো বেশি সরকারি সহায়তা পাওয়া যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে স্কুলটি দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থান অধিকার করবে বলে সচেতন মহলসহ এলাকাবাসীর বিশ্বাস। কারন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা এ স্কুলটির ব্যাপারে খুবই আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে স্কুলটিতে ছাত্র/ছাত্রীদের লেখা পড়া করানোর জন্য স্কুলের ক্যাসম্যন্টরি এলাকার বাইরের অনেকে এখানে ভর্তি হচ্ছে। এমনিভাবে সবমিলিয়ে নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ফ্যাশন মুখী লেখাপড়ার উর্দ্ধে থেকে দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে স্বপ্নের স্কুলে পরিনত হতে চলেছে বলে ছাত্র/ছাত্রী, অভিভাবক ও সচেতনমহলসহ সর্বসাধারণ মনে করেন।