
ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম ডেস্ক :
সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের জটিলতায় আটকে আছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহুল প্রত্যাশিত নতুন বেতনকাঠামো। জুলাই থেকে প্রস্তাবিত এই অষ্টম বেতন স্কেল বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হলেও এখনো মন্ত্রিসভার বৈঠকেই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হচ্ছে না। কবে উঠবে তা-ও পরিষ্কার করে বলতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়।
বেতন কমিশনের প্রস্তাব কবে নাগাদ মন্ত্রিসভায় উঠবে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সচিব মাহবুব আহমেদ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। বিষয়টি তাঁর জানাও নেই।
অর্থ বিভাগ থেকেই বেতন কমিশনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়। গত ১৩ মে বেতন কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা-সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বাধীন সচিব কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে তাঁদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। তখন অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাজেট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ৪ জুনের আগে বেতন কমিশনের সুপারিশ নিয়ে কিছু করা সম্ভব হবে না।
সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল নিয়েই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফরাসউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেতন কমিশন সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। পরে সচিব কমিটিও সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও এখন পর্যন্ত এই সুপারিশের আলোকেই নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের পক্ষে। কিন্তু এটি নিয়ে নিচের স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র আপত্তি উঠেছে। তাঁরা আন্দোলনেরও হুমকি দিয়েছেন। এ কারণে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়ে কীভাবে বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি ঠিক করতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়ে প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রণোদনা (ইনক্রিমেন্ট) দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি করলে হয়তো টাইম স্কেলের চেয়েও আর্থিক সুবিধা কিছু বেশি পাওয়া যাবে। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড পদমর্যাদার বিষয়। এটি বাদ দিলে নিচু স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ মাসে সরকারি অনুদান) প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কবে থেকে নতুন স্কেলে বেতন পাবেন, তাও ঠিক করা যাচ্ছে না। এসব কারণে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ কারণেই মন্ত্রিসভায় পাঠাতে পারছেন না তাঁরা। এটি পাঠাতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের আগে এ বিষয়টি অবহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো নির্দেশনা দেন, সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগ পর্যন্ত পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ীই এগোচ্ছে অর্থ বিভাগ। তবে মন্ত্রিসভায় যখনই বাস্তবায়ন করা হোক না কেন সেটি ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে। কিছু দেরি হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বকেয়া হিসেবে বেতন পাবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন স্কেলে ১ জুলাই থেকে শুধু মূল বেতন পাবেন। ভাতা পাবেন আরও পরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন ও চাকরি কমিশন ১৬টি ধাপে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কমিশনের সুপারিশ ছিল সর্বোচ্চ ধাপে ৮০ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ধাপে ৮ হাজার ২০০ টাকা।