
‘ভয়েস অব সাতক্ষীরা’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে কপিলমুনির মুক্তিযোদ্ধা ফারুখ
পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি ::
দেশের টানে বঙ্গবন্ধুর আহব্বানে দেশের মানুষকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে পাক বাহিনীর কবল থেকে দেশকে বাঁচাতে পেরে নিজে গর্ববোধ করি।
কথায় তাঁর শত্রু মুক্ত করার অভয়বানী, মনে তাঁর অদম্য সাহস আর চোখে দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এ প্রতিবেদকের নিকট একান্ত সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত কথাগুলো ব্যক্ত করেন কপিলমুনির বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার ফারুখ আহম্মেদ। কপিলমুনি কলেজ পাড়ার বাসিন্দা সরদার ফারুক আহম্মেদ অকপটে বলতে থাকেন যুদ্ধকালীণ তাঁর জীবনের গল্প।
সরদার ফারুখ আহম্মেদ বলেন, “আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ¯œাতকোত্তর পড়ি। ওই সময় পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে আলোচনার নামে এদেশে গণহত্যা তথা বাঙালী জাতীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র আটতে থাকেন। ৭মার্চ ‘৭১ জাতীর জীবনে এক উজ্জলতম দিন। রোসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন। আর সেই ডাকে সাড়া দিয়েই যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। তখন ঢাকা থেকে কপিলমুনিতে ফিরে এসে আমার সহপাঠি ও বন্ধুদের উদ্বুদ্ধ করে এপ্রিলের শেষের দিকে যুদ্ধে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাই। সেখানে গিয়ে পাইকগাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ গফুরের সাথে দেখা করি। তার পরামর্শ অনুযায়ী ২৪পরগনা’র তকীপুর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি, তারপর মে মাসে বিহারের চাকুলিয়ায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। সে সময় পাকিস্তানী বাঙালী সেনা অফিসার লেঃ সামছুল আরেফিন (খাকন) এর নেতৃত্বে ৮০জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ‘৭১সালের ২জুলাই বুধবার কপিলমুনির শক্তিশালী রাজাকার ঘাঁটি (প্রখ্যাত সমাজ সেবক রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর সুরম্য আট্টালিকা) ধ্বংস করতে বড়দল, বাঁকা-শ্রীমন্তকাটী হয়ে কপিলমুনি পৌঁছাই। রাত ১টা থেকে পরদিন বেলা ১টা পর্যন্ত বিরতীহীন যুদ্ধ চালাই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, খাদ্য পানীয় জলের অভাবে ও স্থানীয় জনগণের অসহযোগীতার কারণে ১ম যুদ্ধে কপিলমুনির এ রাজাকার ঘাঁটি পতন ঘটানো সম্ভব হয়নি।
‘৭১এর ৫ডিসেম্বর দক্ষিণ খুলনার সকল ক্যাম্প কমান্ডার রাড়–লী ক্যাম্পে একত্রিত হয়ে কপিলমুনি রাজাকার ঘাঁটি পতনের জন্য চুড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহন করেন। এই পরিকল্পনা সভায় নেতৃত্ব দেন খুলনা জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ইউনুছ আলী ইনু, স ম বাবর আলী, শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, আবুল কালাম আজাদ ও মোড়ল আব্দুস সালাম। এ সময় স্থানীয় সকল ক্যাম্প কমান্ডার ওই সভায় অংশ নেন। পরিকল্পনা সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬ডিসেম্বর রাত ১২টা ১মিনিট আর সি এল এর ফায়ার দিয়ে যুদ্ধ শুরু হবে। ৭-৮ একটানা যুদ্ধের পর ৯ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ১৫৫জন রাজাকার আমাদের কাছে আতœসমার্পন করে। আর এর মধ্যদিয়ে কপিলমুনির রাজাকার ঘাঁটির পতন ঘটে। এযুদ্ধে শহীদ হন বাঙালী বীর সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের গাজী আনছার আলী ও খুলনা জেলার বেলফুলিয়া গ্রামের শেখ আনোয়ার হোসেন। তোরাব আলী সানা ও আব্দুল খালেকসহ কয়েক জন আহত হন।
এদিকে রাজাকারদের আতœসমার্পনের খবর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ জনতা কপিলমুনিতে সমাবেত হয়। স্থানীয় কয়েক হাজার জনতার দাবীর প্রেক্ষিতে গণ আদালত গঠনের মাধ্যমে ১৫৫জন রাজাকারের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়”।
বাংলাদেশের স্বধীণতা যুদ্ধে এটাই প্রথম গণ আদালতের রায়ে স্বাধীণতা বিরোধী রাজাকারদের মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয় বলে দাবী করেন এই বীর সেনা ফারুখ। বাংলার অকুতোভয় স্বাধীণতাকামী এই বীরযোদ্ধা সরদার ফারুখ আহম্মেদ আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহব্বান রাখবো। আর নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলবো লেখাপড়া শেষে করে দেশকে ভাল বেসে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়বে।
##