নরপশুদের ফাঁসি চাই


519 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
নরপশুদের ফাঁসি চাই
জুলাই ১৪, ২০১৫ জাতীয় ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম ডেস্ক :
এ দেশে হত্যাকাণ্ড নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু এমন নৃশংস হত্যার দৃশ্য আগে দেখেনি কেউ। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় তিলে তিলে নির্যাতন করে সিলেটে শিশু রাজনকে হত্যা করার ভিডিওচিত্রটি। তবে ২৮ মিনিটের এই ভিডিওর পুরোটা দেখে শেষ করতে পেরেছেন- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। রাজনের ওপর নির্যাতন চালানোর সঙ্গে সঙ্গে হত্যাকারীদের উল্লাস দেখে মনে হয়েছে, এটা ‘জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ’।

এই এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘরে-বাইরে দেশের সর্বত্র ক্ষোভে ফেটে পড়ছে মানুষ। যে যার মতো প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সবার একটাই দাবি- নরপশুদের ফাঁসি চাই। খেলার জন্য চট্টগ্রামে অবস্থানকারী জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম একাই ‘সে নো টু চাইল্ড অ্যাবিউজ’ লেখা প্ল্যাকার্ড বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়েছেন হোটেলের সুইমিং পুলের সামনে। মুশফিক নিজের ফেসবুক পেজে দিয়েছেন ওই ছবি। লিখেছেন, ‘একটি নিষ্পাপ শিশুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার মতো বড় অপরাধ মনে হয় আর নেই। শিশু নির্যাতনকে না বলুন।’ তার ওই ছবিটি আবার শেয়ার করেছেন সতীর্থ খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, মমিনুল হকসহ কয়েক হাজার ভক্ত-অনুরাগী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে থাকা এমন ব্যক্তিগত প্রতিবাদের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গৌরীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী অর্থী আনজুম লিখেছে, ‘সমবয়সী রাজনের মৃত্যুশোকে বন্ধ রাখলাম আমার জন্মদিনের অনুষ্ঠান।’ নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতা উদৃব্দত করে আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা লিখেছেন, ‘এই কসাইখানা আমার দেশ না’। তিনি লিখেছেন, ‘আমি আর কখনো কবিতা পড়বো না, এই বর্বর প্রাণীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত।’

ঘটনার প্রতিবাদে হ্যাকাররা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট হ্যাক করে মুখোশপরা দুটি ছবি যুক্ত করে দিয়ে একটি অডিওতে নির্মমতা ঠেকাতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ঘটনায় দল-মত, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে ফুঁসে উঠেছেন সবাই। রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা, এমনকি গ্রাম পর্যায়েও চলছে রাজন হত্যার নিন্দা, প্রতিবাদ ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবি। সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ হয়েছে সিলেটে। সেখানে সভা-সমাবেশে খুনিদের রক্ষায় প্রভাবশালী মহল ন্যক্কারজনকভাবে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তান হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন রাজনের মা। ফেসবুক-টুইটার হয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাস থেকেও আসছে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি। নির্মম, বর্বর, রোমহর্ষকভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে একটি নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুকে হত্যার ঘটনা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন- খুনিদের কেউ ছাড় পাবে না। হত্যায় জড়িত অন্যদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। এই ঘটনায় সিলেটে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে দু’জন।

আর প্রধান আসামি কামরুলকে গতকাল সৌদি আরবের জেদ্দায় আটক করে পুলিশ হেফাজতে দিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশন। উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সবজি বিক্রেতা রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে বারবার চেয়েও সে পায়নি একটুও পানি। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কাছে নিজেকে সোপর্দ করে রাজন। পুরো দৃশ্য ক্যামেরায় ভিডিও করে নরপিশাচরা। ২৮ মিনিটের সেই ভিডিও তারা অনলাইনেও ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওটি দেখে সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থেকে সর্বসাধারণ- সবাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ‘আমি নিশ্চিত- ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যাবার সময় অনেকে মারতে যোগদানও করেছে।’ তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাকে, যিনি ভিডিওটা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন এবং বলেছেন, এই কারণে ভবিষ্যতে হয়তো অনেক রাজন বেঁচে যাবে। গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। আমার ধারণা, অন্যদেরও একই অবস্থা। মানুষের পক্ষে ঘুমানো অসম্ভব। আসুন, সবাই মিলে রাজনের খুনিদের ঘুম হারাম করি।’

প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনও ভিডিওটি দেখার পর রাতে ঘুমোতে পারেননি উল্লেখ করে ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ‘পৃথিবীতে যুগে যুগে কিছু মানুষরূপী অমানুষ জন্ম নেয়, যাদের কর্মকাণ্ড পুরো মানব জাতিকে অপরাধী বানিয়ে দেয়।’ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের আহ্বানে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা রাজন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এ আয়োজনের ব্যানারে লেখা ছিল- ‘রাজনের জঘন্য হত্যাকাণ্ডে জেগে উঠুক বাংলাদেশের বিবেক’।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও স্থপতি সাঈদা সুলতানা অ্যানি রাজন হত্যার হত্যার প্রধান আসামি সৌদি আরবে আটকের খবর প্রকাশের পরপরই লিখেন, ‘এবার অপেক্ষায় রইলাম দানবের বিচার এবং মহাশাস্তির।’ খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ যুক্ত বিবৃতিতে শিশু রাজনের খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান। তারা বলেন, ‘নিহত রাজনের কাছে, তার বাবা-মায়ের কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা চাইতে হবে দেশের প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে, সরকার ও রাষ্ট্রকে।’

অপরাধীদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শিশু রাজনের পরিবারকে প্রদান, রাজনের পরিবারের সদস্যদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাজন হত্যা মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগের দাবি জানান তারা। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারপারসন এমরানুল হক চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, অভিযুক্তরা কেউ যেন বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে আইনের ফাঁক দিয়ে যেন তারা বের হতে না পারে সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও সতর্ক থাকতে হবে।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তজা ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, রাজনের হত্যাকারীদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে কোনো শিশুকে এভাবে কেউ নির্যাতনের সাহস না পায়। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। এদিকে, গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাজন হত্যাকাণ্ডটি হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে ইতিমধ্যে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।