নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের সাথে লে: কমান্ডার রানা জড়িত না। খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে রানা পরিবারের দাবি ।


589 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের সাথে  লে: কমান্ডার রানা জড়িত না। খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে রানা পরিবারের দাবি ।
আগস্ট ১, ২০১৫ খুলনা বিভাগ ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

ওযাহেদ-উজ-জামান, খুলনা :
নারায়নগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ হত্যাকান্ডের সাথে লে: কমান্ডার (অব:) এম.এম. রানা জড়িত নন। তিনি র‌্যাবের একটি গ্রেফতার অভিযানে সহায়তা করেন মাত্র। কিন্তু তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে দেয়ার পাশাপাশি চাকরীর সকল সুযোগ-সুবিধা এবং সকল প্রকার ন্যায় বিচার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এম.এম. রানার পরিবারের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রানা’র স্ত্রী নুর-এ-হাফজা লিখিত বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জের এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্তের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনরূপ সাক্ষ্য প্রমান ব্যতীত এমএম রানার বিরুদ্ধে কথিত অপহরণের সহযোগিতার অভিযোগে আসামি করেন। অথচ একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, সু-শৃংখল এলিট ফোর্স র‌্যাবের চেইন অব কমান্ড এবং অফিসিয়াল অর্ডারের প্রয়োজন থাকে। তাছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতেও এমএম রানা কোনরূপ নিজেকে জড়িয়ে ‘অপহরণ’ ও হত্যার সহায়তার দোষ স্বীকার করেননি। এমনকি কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল তারেক সাঈদ ও অপারেশন অফিসার মেজর আরিফ তাদের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতেও এমএম রানাকে জড়িয়ে কোন বক্তব্য দেননি। তাহলে কেন একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে বছরের পর বছর কারাবন্দী রেখে পুরো পরিবারটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রানার স্ত্রী বলেন, র‌্যাবের মত একটি সুশৃংখল বাহিনীকে চেইন অব কমান্ড অনুসারে কাজ করতে হয়। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের গ্রেফতারের মত বৈধ আদেশ অধস্তন কর্তৃপক্ষের অমান্য করার কোন সুযোগ নেই। নারায়ণগঞ্জের ওই গ্রেফতারের আদেশটি অধিনায়ক লে: কর্ণেল তারেক সাঈদ কোম্পানী কমান্ডারদের সম্মেলনে অপারেশন অফিসার হিসেবে মেজর আরিফের ওপর দায়িত্ব দেন। কারণ কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম সিদ্দিরগঞ্জ থানার অধিবাসী। যেটি মেজর আরিফের টেরিটোরিয়াল জুরিসডিকশনের অন্তর্ভূক্ত। তাছাড়া ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত লে: কমান্ডার এমএম রানা তার টেরিটোরিয়াল জুরিডিকশন চাষাড়া সংলগ্ন আর্মি মার্কেটের সামনে নিজস্ব অপারেশন শেষে কালী বাজার ক্যাম্পে আসামি ও উদ্ধারকৃত মালামাল রেখে সি.ও’র নির্দেশে মেজর আরিফের অভিযানে সহায়তা করেন মাত্র। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে গ্রেফতারে মেজর আরিফকে সহায়তা না করলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করার অপরাধে সার্ভিস রুল অনুযায়ী কোর্ট মার্শাল অথবা বড় ধরনের শাস্তি হতো রানার। তাছাড়া প্রকাশ্য দিবালোকে চেকপোষ্ট বসিয়ে আসামি গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে ‘অপহরণ’ গল্প তৈরি হবে এমন ধারণাও রানার থাকার কথা নয়। যেহেতু ওই ৭ জন আসামি কেউ রানার আসামি নয় বা তার এলাকার আসামিও নয়, সেহেতু গ্রেফতারের পর তাদের মেজর আরিফ কোথায় নিয়ে যাবেন সেটি লে: কমান্ডার এমএম রানার জানার কথা নয়। কিন্তু উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালনে শুধুমাত্র গ্রেফতার অভিযানে লজিষ্টিক সাপোর্ট দিয়েই
সংবাদ সম্মেলনে রানার স্ত্রী আরও অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একজন অফিসার। কিন্তু তাকে কোন প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বেআইনীভাবে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। যা বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার ও নৌবাহিনী আইনের পরিপন্থী বলেও তিনি দাবি করেন। একজন সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সর্বপ্রথম বোর্ড অব ইনকোয়ারী এবং সর্বশেষ কোর্ট মার্শাল করার বিধান থাকলেও তার স্বামীর ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। যদিও তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক ওসমানী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কমিশন্ড অফিসার।
রানার স্ত্রী বলেন, তার স্বামী সকল প্রকার ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছেন এবং উচ্চ আদালতেও তার জামিনের শুনানীতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। যা ফৌজদারী কার্যবিধি ও সংবিধান পরিপন্থী বলেও তিনি দাবি করেন।
রানার বর্তমান পারিবারিক অবস্থা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পিতার মৃত্যুর পর রানাই তার পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তি। তার আয়ের ওপরই বিধমা মায়ের ভরণপোষণ আর ভাইয়ের লেখাপড়া চলত। কিন্তু তার এ করুণ পরিণতির পর চাকরীর সকল সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এমনকি বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হলেও এলপিআরের টাকাও দেয়া হয়নি। যে কারনে রানার পরিবারের সদস্যদের একটি অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হতে হচ্ছে। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের কন্যা সস্তান নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের দ্বারস্থ হয়েছেন। রানার ছোট ভাইয়ের পড়াশুনা বন্ধের পথে। বৃদ্ধ মা যেমন সস্তানের এ দুরাবস্থায় পাগলপ্রায় তেমনি তার একমাত্র শিশু সস্তানটিও পিতার স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত। তার ভবিষ্যত নিয়েও দেখা দিয়েছে শংকা। এ অবস্থায় রানার পরিবার সুবিচার চায়। এজন্য বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রানার বৃদ্ধ মাতা কোহিনুর বেগম, সাড়ে তিন বছরের একমাত্র কন্যা মারিয়া আলভিনা, শ্বশুর এসএম জামাল উদ্দিন এবং সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।