
ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডেস্ক :
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর (৭৩) রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রইল।
বৃহস্পতিবার এই রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে নিজামীর বিরুদ্ধে এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো। একই বেঞ্চে গত মঙ্গলবার এই জামায়াত নেতার রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ হয়। পরে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ৫ মে (বৃহস্পতিবার) দিন ঠিক করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামী এখন নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে তার দণ্ড কার্যকর করবে সরকার।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধী নিজামী এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
গত ২৯ মার্চ একাত্তরে আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর পক্ষে তার ছেলে ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার ৭০ পৃষ্ঠার আবেদনে ৪৬টি যুক্তি তুলে ধরে দণ্ড বাতিল ও অভিযোগ থেকে খালাস চান।
এর আগে গত ১৫ মার্চ জামায়াতের আমির নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। রায় প্রকাশের পর নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদনের সুযোগ রাখা হয়। সে অনুযায়ী রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হয়।
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর নিজামীকে কারাগারে নেয়া হচ্ছে-এএফপি/ফাইল ছবি
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় বুদ্ধিজীবী হত্যা ও তার নিজ এলাকা পাবনায় হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর যুদ্ধাপরাধী নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারই পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল বলেও রায়ে বলা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নিজামীর বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে পাবনার বাউসগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ৪৫০ জনকে নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ, করমজা গ্রামে ১০ জনকে হত্যা ও তিনজনকে ধর্ষণ, ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে হত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনার দায়ে (২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ) নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের ওই রায় বাতিল ও বেকসুর খালাস চেয়ে নিজামীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সেই ফাঁসির রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগের রায়ে, করমজা গ্রামে ১০ জনকে হত্যা ও তিনজনকে ধর্ষণের দায় (৪ নম্বর অভিযোগ) থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়। বাকি তিন অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।