পাইকগাছা পৌরসদরের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত


173 বার দেখা হয়েছে
Print Friendly, PDF & Email
পাইকগাছা পৌরসদরের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ খুলনা বিভাগ ফটো গ্যালারি
Print Friendly, PDF & Email

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ ::

খুলনার পাইকগাছায় শিবসার জোয়ারে অতিরিক্ত পানির চাপে পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে নদীর বুক চিরে গড়ে ওঠা শহর রক্ষাবাঁধ ভেঙ্গে সদরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে থানা সদরের সামনে
নির্মিত বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর, কাঁচা বাজারসহ নিন্মাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে।ভূক্তভোগীরা জানান, নদীতে জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে সদ্য নির্মিত
শহররক্ষা বাঁধের থানার সামনের অংশ ভেঙ্গে গেছে। এতে ঐএলাকা দিয়ে প্রবল
গতিতে বাঁধ অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়ায় থানার সামনের নির্মিত বঙ্গবন্ধু
চত্ত্বর, কাঁচা বাজার, কাঁকড়া পট্টিসহ নিম্নাঞ্চলে লোনা পানিতে তলিয়ে
গেছে। এতে পথচারীসহ, দোকানিদের ভোগান্তির পাশাপাশি নতুন করে
হুমকির মুখে পড়েছে বৃক্ষরাজির।
এর আগে পাইকগাছা পৌরকতর্ৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে পৌরশহর রক্ষার নামে
অপরিকল্পিতভাবে শিবসা নদীর চরভরাটি অংশ ঘিরে বাঁধ নিমার্ণ করে।
চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য
আক্তারুজ্জামান বাবু এ বাঁধের উদ্বোধন করেন।
শুরু থেকেই চরম সমালোচনার মুখেও শুধুমাত্র শহররক্ষার স্বার্থে বাঁধটি
সম্পন্ন হয়। এর মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই বাঁধের অভ্যন্তরে খন্ড খন্ড করে
বেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করে শুরু হয় মাছ চাষ। শিবসার চরভরাটি বিস্তীর্ণ
এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা বনায়ন প্রকল্পের অভ্যন্তরে পানি জমি থাকায়
সেখানকার গাছেও ব্যাপকহারে মড়ক শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে, ৭ দিনের মধ্যে বাঁধ অপসারণের জন্য স্থানীয় পৌরসভাকে
নির্দেশ দেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ
বেগম। তবে এরপরও বাঁধটি অপসারণ না হলেও শেষ পর্যন্ত শিবসার জোয়ারের
অতিরিক্ত পানির চাপ সহ্য করতে পারেনি।
শিবসা নদীর তীরে ১৯৯৭ সালে পাইকগাছা পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরেও নদী তীরে কোন বাঁধ নিমার্ণ করতে পারেনি যথাযথ
কতর্ৃপক্ষ। ফলে প্রায় প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় শিবসায় জোয়ারের
পানি বৃদ্ধি পেলে তা ঢুকে পড়তো পৌর অভ্যন্তরে। এতে জনবসতিপূর্ণ
এলাকার পাশাপাশি দোকানপাট, রাস্তা-ঘাট লোনা পানিতে তলিয়ে যেত।
সবুজ বৃক্ষরাজিতেও পড়তো নেতিবাচক প্রভাব।
সর্বশেষ সমালোচনার মুখেও পৌরকতর্ৃপক্ষের দেয়া বাঁধটি স্থাপন হলে
সুযোগ পায় দখলদাররা। তারা বাঁধের অভ্যন্তরে খন্ড খন্ড করে বাঁধ দিয়ে দখলে
নিয়ে শুরু করে মাছ চাষ। এছাড়া বাঁধের অভ্যন্তরে জমে থাকা পানিতে মৃত্যু
হয় বনায়নের বহু গাছের।
শিবসা তীরে শহর রক্ষা বাঁধের ফলে, জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করতে না
পারলেও, বৃষ্টির পানিতে বাঁধের ভেতরের অংশে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
পাইকগাছা উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় জানান, “শিবসা নদীর
চর ভরাটি জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনাঞ্চলীয় বিভিন্ন
প্রজাতির গাছের চারা রোপন করে বনায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে
বাইন, কেওড়া, ওঁড়া, সুন্দরী ও গোলপাতা গাছ। এ গাছগুলো জোয়ার-ভাটার
সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়, তা হলে
জলাবদ্ধতার কারণে একে একে সেখানকার সব গাছ মরে যাবে। ইতোমধ্যে
গাছ মরা শুরু হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ
প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
সর্বশেষ রবিবার শিবসার জোয়ারের অতিরিক্তি পানির চাপে পৌরকতর্ৃপক্ষের
দেয়া বাঁধের থানা ভবনের সামনের অংশে ভেঙ্গে যায়। এসময় থানার সামনের
বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর, রাস্তা-ঘাট, কাঁচা বাজারসহ নিন্মাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়
ঢুকে পড়ে লোনা পানি।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাইকগাছা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী
মো: রাজু হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা শিবসার
কোথাও বাঁধ নিমার্ণ করেনি। কেউ করে থাকলেও তা পাউবো অনুমোদিত
নয়। সুতরাং বাঁধ ভাঙ্গনের খবর তাদের কাছে নেই।