
স্টাফ রিপোর্টার :
তখনও মরন নেশায় শত্রুবাহিনী বার বার ঝাঁপিয়ে পড়ছে বীর বাঙ্গালির ওপর। রক্তের নেশায় পাকি বাহিনী তবু চালিয়ে যাচ্ছে গনহত্যা যজ্ঞ। এরপরও থেমে যায়নি বাংগালির অস্ত্রের ট্রিগার। স্তব্ধ হয়নি গেনেড বিস্ফোরনের দুর্দান্ত আওয়াজ। বীর যোদ্ধারা একের পর এক শত্রু সেনাকে নিধন করে বীরদর্পে এগিয়ে চলেছেন দেশের অভ্যন্তরে, বিলে খালে, নদীতে, মাঠে ময়দানে,হাটে বাজারে ,গ্রাম গঞ্জে আর জনপদে। যুদ্ধের শেষ অংক সমাপ্ত হবার আগেই বীরযোদ্ধারা ঘোষনা করলেন ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস।
সাতক্ষীরায় ৭ ডিসেম্বর আসে প্রতিবারই। আসছে ৪৪ বছর ধরে। অথচ এই দিবসটি নিয়ে পৃথক ভাবে ভাবা হচ্ছে না। তথ্য অনুসন্ধান ও গবেষনারও যেনো কেউ নেই।
সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সাতক্ষীরা মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। সেদিনের স্মৃতি জাগানিয়া নানা তথ্য হাজির করে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এদিনটি কারও করুনায় আসেনি , এটি ছিল একটি বড় অর্জন যা বাঙ্গালি জাতিকে আরও উজ্জীবিত করেছিল।
৭ ডিসেম্বর কিভাবে এলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলোচকরা বলেন শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি বীরোচিত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুক্তিবাহিনী অর্জন করছিল এক একটি বিজয়।
এভাবে টাউন শ্রীপুরের যুদ্ধ, ভোমরার যুদ্ধ, বেলেডাঙ্গার যুদ্ধ, গোপালপুরের যুদ্ধ,কাকডাঙ্গার যুদ্ধ, পারুলিয়ার যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের আরও কলা কৌশল অর্জনে সহায়তা করে। পাঞ্জাবি এসডিওকে বন্দী করে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে অগ্নি সংযোগ, বালাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড্ডয়ন , ন্যাশনাল ব্যাংক অপারেশন,পাওয়ার হাউস যুদ্ধসহ ১৬ টি সম্মুখ যুদ্ধ ও নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙ্গালি দামাল ছেলেরা অগ্রসর হতে থাকে। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি পৃথক দল ত্রিমুখী আক্রমনের পরিকল্পনা করে শহরে হাজির হয় ৬ ডিসেম্বর রাতে। এ খবর আঁচ করতে পেরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী রাত না পোহাতেই বেনেরপোতা ও সরসকাটি ব্রীজ ডিনামাইট চার্জ করে উড়িয়ে দিয়ে পিছু টান দেয়। এ সময় মুক্তিসেনারা শহরের সব সরকারি স্থাপনা দখল করে সাতক্ষীরাকে মুক্ত ঘোষনা করে। তারা নিজ মাতৃভূমির মাটিতে চুমু খেয়ে শহীদদের স্যালুট করেন।
এ সময় বিজয়ের মহানন্দের সাথে সাথে মিশে যায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারানোর কান্না। দেশ শত্রুমুক্ত হবার আগেই সাতক্ষীরা মুক্ত হয়ে যায়। পাক বাহিনীর পলায়নের সাথে সাথে পালিয়ে যায় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ঘাতকরা।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রেসক্লাব সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবু আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নব নির্বাচিত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনিসুর রহিম, নব নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সাবেক সাধারন সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস,অর্থ সম্পাদক ফারুক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ সাংবাদিক।
তারা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবকে মুক্তচিন্তার কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালিন স্মৃতি চারন করে দেশপ্রেম চেতনাকে আরও শানিত করা সম্ভব’।