
নাজমুল হক:
একের পরে এক দুর্নীতির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখোমুখি হয়েছে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের বরখাস্তকৃত স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হক। সোমবার সকালে সাতক্ষীরা থেকে একটি গাড়ি নিয়ে খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। ফজলুল হকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিকসহ সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম লুটপাটের অভিযোগে খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়েছিলো। তিন ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদে ফজলুল দুর্নীতির বিষয় অস্বীকার করে নিকেজে নির্দোষ দাবী করেন।
সূত্র জানায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য সাত কোটি ৯৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৫ টাকা মূল্যের ঔষধ, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও সার্জিকাল যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু না করতে পারায় ওই মালামাল ফেরৎ পাঠানোর জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি পাওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই ৫৪৯ নং স্মারকে ওইসব মালামাল ফেরৎ না পাঠিয়ে সদর হাসপাতাল, সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে ও বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচীব আব্দুল মালেক সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনকে একটি চিঠি দেন। নির্দেশ পেয়ে নিয়ম অনুযায়ি সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ সালেহ আহম্মেদ ওইসব মালামাল চাহিদাপত্র দিয়ে বুঝে নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হকের কাছে তাৎক্ষণিক হস্তান্তর করেন।
ডাঃ সালেহ আহম্মেদ বদলি হলে ডাঃ উৎপল কুমার দেবনাথ সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করার পরপরই গত অর্থ বছরের আট কোটি টাকা ও সাড়ে তিন কোটি টাকার মালামাল সম্পর্কিত কাগজপত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি লক্ষ্য করেন। গত ২১ মার্চ হাসপাতালের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি। কমিটির প্রধান হিসেবে ডাঃ আবুল হোসেন, সদর হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডাঃ আসাদুজ্জামান এবং সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আরিফুজ্জামানকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়
তদন্ত কমিটি ১৯ মে সিভিল সার্জনের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের স্টোর কিপার ফজলুল হকের বিরুদ্ধে সরকারি ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম লুটপাটের মাধ্যমে সাড়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় সিভিল সার্জন ডাঃ উৎপল কুমার দেবনাথ ৯ জুন তাকে চাকুরি থেকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেন।
অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে তথ্য থাকে ফজলুল হক জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে অঢেল সম্পত্তি মালিক হয়েছে। শহরে নামে বে নামে তার বিলাশবহুল বাড়ি আছে। আছে আরো কয়েকটি গাড়ি। সরকারের তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারী কিভাবে এতো অর্থ বিত্তের মালিক হন তা নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে দুদকের কর্মকর্তারা তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীর সম্পত্তির পরিমাণ জেনে থ মেরে যায়।
খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান দৈনিক কালের চিত্রকে জানান, দুদকের নিকট অভিযোগ আসায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ডাকায় ফজলুল সোমবার দুদক কার্যালয়ে হাজির হন। সেখানে তিনি নিজেকে নির্দোস দাবী করেন। তবে শহরে তার সামান্য সম্পদ আছে বলে তিনি দুদকে স্বীকার করেন।