
অনলাইন ডেস্ক ::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রেখে উপযুক্ত চিকিৎক গড়ে তুলতে যথাযথ পাঠ্যক্রম অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি খাতেও মেডিকেল কলেজ হচ্ছে। তবে, সেক্ষেত্রে আমি বলব, তাদের একটু নজর দেওয়া দরকার- শিক্ষার মানটা যথাযথ আছে কি না। কারিকুলামগুলো ঠিকমতো আছে কি না সেই দিকেও একটু বিশেষভাবে নজর দেওয়া দরকার।’
শেখ হাসিনা রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন-এর তৃতীয় এবং বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিং-এর প্রথম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের
চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের আরো উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য আমরা বিদেশে পাঠাতে চাই।
তিনি বলেন, আমার এটাই প্রশ্ন যে, যদি অন্যদেশ পারে তবে, আমরা পারবো না কেন? কারণ, আমাদের মেধা বা জ্ঞান কোনটিরই অভাব নেই। তবে, সুযোগের অভাব ছিল। যেটি আমরা এখন করে দিচ্ছি।
শিক্ষার মানের প্রতি নজর দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বই লেখার প্রতিও মনোনিবেশ করার আহবান জানান।
মেডিকেল সাইন্স এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আর এসব বই এত দামী সবার পক্ষেতো এসব বই কেনা সম্ভব নয়। কাজেই আমার মনে হয় আপনাদের বিভিন্ন এসোসিয়েশন আছে এবং মন্ত্রণালয় থেকেও এটার উদ্যোগ নেওয়া উচিত এবং প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লাইব্রেরিটা একান্তভাবে প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় নতুন নতুন রোগের পাশাপাশি নতুন নতুন যে প্রযুক্তি আবিস্কার হচ্ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহবান জানান।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব ডা. সিরাজুল হক খান এবং বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন (বিএসসিসিএম)-এর সভাপতি অধ্যাপক ইউএইচ সাহেরা খাতুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন ক্রিটিকন বাংলাদেশ-২০১৮’র কংগ্রেস সভাপতি ডা, মীর্জা নাজিম উদ্দিন। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন বিএসসিসিএম-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এএসএম আরিফ আহসান।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ,সংসদ সদস্যগণ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করি। সম্প্রতি রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নতুন দু’টি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। সিলেটেও আরও একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করবে সরকার।
চিকিৎসার জন্য দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে, ডাক্তারদের কথা-বার্তা এবং পরিচর্যায়ও অর্ধেক রোগ ভাল হয়ে যেত পারে সেদিকে আমাদের চিকিৎসকদের একটু বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ক্যামেরাসহ অপারেশন থিয়েটারে মিডিয়া ঢুকে পড়ছে। আত্বীয়-স্বজন, ভিজিটার যাচ্ছে, ভাত-মাছের মতো। তিনি ক্রিটিক্যাল রোগীর ক্ষেত্রে ভিজিটরদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করার আহবান জানিয়ে বলেন, কই বিদেশেতো এভাবে রোগী দেখতে দেওয়া হয় না। প্রয়োজনে ভিজিটর কর্নার থাকবে, সেখানে মনিটরে রোগী দেখে আত্বীয়-স্বজন, প্রিয়জনেরা চলে যাবে অথবা গ্লাসের বাইরে থেকে রোগী দেখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসকদের আরো কঠোর হতে হবে। বাধা দিতে হবে। রোগী বাঁচাতে চাইলে চিকিৎসাটা ভালভাবে করতে দিতে হবে।
শেখ হাসিনা ভিজিটরদের বাধা প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর হবার জন্য প্রয়োজনে তার (প্রধানমন্ত্রীর) রেফারেন্স ব্যবহারের আহবান জানিয়ে বলেন, আমার ভোট বাড়লো কি কমলো সেটা চিন্তা নয়, রোগী বাঁচলো কিনা, তারা সেবা পাচ্ছে কি না সেটাই আমার চিন্তা। এক্ষেত্রে পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারের চিকিৎসক এবং নার্সদের উন্নত প্রশিক্ষণের ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
পৃথিবীতে নার্সিং একটা মর্যাদাপূর্ণ পেশা হলেও আমাদের দেশে এটিকে একটু নিচু চোখে দেখা হতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্যই তার সরকার নার্সিং পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছে।‘
শুধু ওষুধ খাওয়ালেইতো আর রোগী ভাল হবে না সেজন্য খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা -সব দিকেই তার সরকার নজর দিচ্ছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণকালে দেশে মোট সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ১৪টি যা বর্তমানে ৩৬টিতে উন্নীত হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৯টি। সরকারি-বেসরকারি মিলে ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ২৮টি।