
ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম ডেস্ক :
সকাল দশটায় জার্মানির মিউনিখ শহরের তাপমাত্রা ছিলো ৭ ডিগ্রী। মোটামুটি ঠান্ডার মধ্যেও মাদারীপুরের ছেলে মোজাম্মেলের চোখে মুখে হাসি। তবে সেই হাসিতে লুকিয়ে আছে ১৭ বছরের অভিবাসী জীবনের দু:খ কষ্ট! গত শনিবার থেকে জার্মানির মিউনিখে যে শরণার্থীরা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেষ্ট থেকে ট্রেনে এবং অষ্ট্রিয়া থেকে বাসে করে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের একজন বাংলাদেশের ছেলে মোজাম্মেল। ১৭ বছর আগে মোজাম্মেল পরিবারের সুখ স্বাচ্ছ্যন্দের আশায় দালালের কথায় ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে লিবিয়াতে আশ্রয় নেন। এরপর সেখান থেকে তুর্কী হয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে সিরিয়ান শরনার্থীদের সঙ্গে মিশে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে হাঙ্গেরি হয়ে এখানে পৌঁছেছেন। মোজাম্মেলের এই দীর্ঘযাত্রা যেভাবে ৬ লাইনে বর্ননা হলো আদতে তা নয়! ১৭ বছরের অনিশ্চিত জীবনে প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হয়েছেন মৃত্যুর!
১৭ বছর না হলেও ৮ বছরের একই গল্প বললেন মোজাম্মেলের পাশে থাকা ঢাকার বিক্রমপুরের ছেলে রফিক। সেই কবে পরিবার পরিজন দেখেছেন মনে নেই। আবার এই দীর্ঘযাত্রায় কতোবার পরিবারের কাছ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছেন হিসাব নেই। দু’জনের সাথে কথা বলে জানা গেল হাঙ্গেরি পর্যন্ত প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি এই শরণার্থীদের সাথে রয়েছেন। ইতিমধ্যে শতাধিক এসে পৌঁছেছেন জার্মানে। বাকীদের খবর তারা আর জানেন না। এই বাংলাদেশিদের অনেকে এসেছেন লিবিয়া থেকে, আবার অনেকে গ্রীসে দীর্ঘদিন থেকে এই সুযোগে ভীড়েছেন শরনার্থীদের সাথে।
মিউনিখের হাফবানোফ সেন্ট্রাল ষ্টেশনে শনিবার আর রবিবার সব মিলিয়ে ১৫ হাজারের মতো শরণার্থী এসেছেন। এদেরকে জার্মানবাসী হাততালি দিয়ে স্বাগতম জানান। সেই সাথে অনেকেই নিজ উদ্যোগে কফি, চা, পানীয়, খাবার ইত্যাদি বন্টন করছেন সেখানে। রবিবার জার্মান সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেষ্ট কেটালী থেকে মোট ৫ টি ট্রেনে ৫ হাজারের বেশি শরনার্থী আসেন। এইসব শরনার্থীদের তাৎক্ষনিক নাম রেজিষ্ট্রেশন করে, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসে করে বিভিন্ন স্থায়ী ক্যাম্পে নেয়া হচ্ছে। এসময় কথা হয় মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ছেলে শামীমুর এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারার ছেলে নূরুল আমিনের সাথে। দু’জনেই ৭/৮ বছর ধরে কখনো সমুদ্রে ভেসে, কখনো পায়ে হেটে, কখনো গুলির মুখ থেকে বেচে এসেছেন এখানে। দু’জনেই বলেন, এইবার আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। রিফিউজি ষ্ট্যাটাস পেলেই বাংলাদেশে পরিবার দেখতে যাবেন বলে জানান তারা। গত ৩ মাস ধরে এই সিরিয়ান শরনার্থীদের সাথে মিশে বিভিন্ন দেশে ঢোকার চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত এসেছেন জার্মানে।
এদিকে অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, অষ্ট্রিয়ায় শরণার্থী শিবিরে কাজ করা দোভাষীরা তাদের জানিয়েছে অনেক বাংলাদেশি অষ্ট্রিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে রয়েছেন।
২০১৫ সালে এখন পর্যন্ত কি পরিমান বাংলাদেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে এসে আশ্রয়প্রার্থী হয়েছেন এমন তথ্য জানতে চাইলে পোল্যান্ডে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা ফ্রনটেক্স ইউরোপার প্রেস অফিস থেকে ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ইমেইলে জানায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে মোট ৬ হাজার ৮৫ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে এসে আশ্রয়প্রার্থী হয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথ সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান দিয়ে এসেছেন ৩ হাজার ৮৮৬জন। গতমাসে শুরু হওয়া মাইগ্রেশন ক্রাইসিসে সেটা আরো অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।