
স্টাফ রিপোর্টার : তখন দুপুর আড়াইটা। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার পথে কামরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি খুব অনুনয় বিনয় করে তার কথা শোনার অনুরোধ জানালেন। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললেন, আমার স্ত্রী আসমা সকাল থেকেই সাতক্ষীরা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বেডে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ডাক্তার-নার্সদের বার বার বলছি, সিজারের জন্য কিন্তু কোনভাবেই তারা শুনছে না, বলছে এ্যানেসথিয়ার জন্য ডা. মুজিবুর রহমানকে ডেকে আনতে। তিনি না আসলে অপারেশন হবে না। তাকে ডাকতে গিয়েছিলাম নাহার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তিনি সেখানে রোগী দেখছেন, হাতজোড় করে বলেছি, আসেনি। তিনি বললেন, তিনি মাতৃ সদনের ডাক্তার না।
সাতক্ষীরা শহরতলীর বিনেরপোতা গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান তখনও কথা শেষ করেননি। বললেন, কয়দিন আগেই সদর হাসপাতালে আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বাচ্চা হতে গিয়ে মারা গেছে। এজন্য আমি সদর হাসপাতালে যায়নি। মাতৃসদনে নিয়ে এনেছি। কিন্তু ডা. মুজিবর রহমান না আসলে নাকি তাদের কিছুই করার নেই।
বিষয়টি জানতে সাতক্ষীরা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. লিপিকা বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ডা. মুজিবুর রহমানের এ্যানেসথিয়ার বিশেষ ট্রেনিং রয়েছে। শুধুমাত্র এ্যানেসথিয়ার জন্য তাকে মাতৃসদনে এ্যাটাস করা। রোগী আসলে আমরা তাকে ফোন করি, তখন তিনি আসেন। কিন্তু গত সাতদিন ধরে তিনি অফিসে আসেন না, অসুস্থতার কথা বলে। এখন তিনি না আসলে আমি সিজার করবো কিভাবে? যদি স্বাভাবিকভাবে না হয় তাহলে হয়তো সদর হাসপাতালে পাঠানো ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ডা. মুজিবুর রহমান কখনই ঠিক মত অফিস করেন না। সকাল-বিকাল পড়ে থাকেন নিজ মালিকানাধীন নাহার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আজও দুপুরে সেখানে রোগী দেখছিলেন তিনি। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত এক সপ্তাহে কোনদিনই অফিসে ঢোকেননি তিনি। নেননি ছুটিও। যদিও নিজ ক্লিনিকে ঠিকই রোগী দেখেন প্রতিদিন।
এ ব্যাপারে ডা. মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে মাতৃসদনে কখনোই এ্যাটাস করা হয়নি। আমি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় ১০/১২ বছর সেখানে এ্যানেসথিয়া দিয়ে এসেছি। এজন্য বরং আমার ক্ষতি হয়েছে। আমাকে সেখানে দেখিয়ে প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়া কেটে নেওয়া হয়। আমি কখনো সেখানে থাকিনি।
তিনি বলেন, আমি আর সেখানে যাব না। ইতোমধ্যে উপরে আবেদন করেছি ট্রান্সফারের জন্য।