
ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডেস্ক :
বৃষ্টি যখন জোরে আসা শুরু করল, তখন মস্তবড় এক ছাতা হাতে মাঠে দৌড়ে এসেছিলেন নাসির। সাকিবকে সেই ছাতার নিচে নিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন তিনি; মুশফিককেও নিয়ে আসা হয়েছিল এভাবেই। এ দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যানের চওড়া কাঁধের ওপরই যে দলের সব আশা, তা বোধহয় নাসির-সৌম্যদের ছাতা হাতে দৌড়ে আসা দেখেই বোঝা যায়! গতকাল শেষ বিকেলের এই দৃশ্য প্রতীকী হলেও চট্টগ্রাম টেস্টের বড় চ্যালেঞ্জটাই অপেক্ষা করছে আজ। মুশফিক-সাকিবের বড় কোনো জুটিই চট্টগ্রাম টেস্টের চালকের আসনে বসিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশকে; তাদের বড় কোনো ইনিংসেই কেবল বাংলাদেশ লিড নিতে পারে। তাই আজ তাদেরকেই আস্থার ছাতা তুলতে হবে গোটা দলের ওপর।
তামিম ইকবাল আর মাহমুদুল্লাহর বিপরীতধর্মী হাফ সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় দিন শেষে চট্টগ্রাম টেস্টে এগিয়ে বাংলাদেশই। তৃতীয় উইকেটে তাদের ৮৯ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ থেকে বাংলাদেশকে মাত্র ৬৯ রান দূরে রেখেছে। অবশ্য সামান্য এই দূরত্বও বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ হতে পারে, যদি আজ সকালে অপরাজিত সাকিব-মুশফিক ব্যর্থ হন। ব্যবধান ঘুচিয়ে তারাই এনে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় লিড। আবার আউট হয়ে আশার তরণী ডুবিয়ে দিতে পারেন তারাই। তাই একটু এগিয়ে থাকার তৃপ্তি আর পিছিয়ে পড়ার সংশয় নিয়ে আজ চট্টগ্রাম টেস্টের দিকে চোখ রাখবে বাংলাদেশ।
বৃষ্টি যদি আজও ক্রিকেট লড়াইয়ে বিঘ্ন ঘটায় তো অন্য কথা, না হলে বিশ্বসেরা পেস আক্রমণের সঙ্গে আরও একটা জমজমাট লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম। লড়াইয়ের ক্ষেত্র গতকালও প্রস্তুত ছিল। সে লড়াইয়ে আংশিক জয় কিন্তু বাংলাদেশেরই। কারণ ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল ও ভারনন ফিল্যান্ডার কোনো উইকেট পাননি। বাংলাদেশের উইকেটগুলো নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পার্টটাইম বোলাররা। প্রথম আঘাত হানেন ভ্যান জাইল। তার লেগ সাইডে সুইং করা নিরীহ একটি বলে ভারসাম্য হারিয়ে স্টাম্পড হন ওপেনার ইমরুল কায়েস। বাংলাদেশের রান তখন ৪৬।
ওপেনিং জুটিতে ইমরুল-তামিম ভালোই সামলাচ্ছিলেন ডেল স্টেইনদের। কিন্তু সাধারণ মানের জাইলকে খেলতে ব্যর্থ হয়ে ইমরুলকে ফিরতে হলো। পরে অতি আত্মবিশ্বাসের মাশুল দিতে হয়েছে মুমিনুল হককে। আগের বলেই হারমারের বলে বাউন্ডারি মেরেছিলেন তিনি। পরের বলে ভেতরে ঢুকে আসা অফস্পিন ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন মুমিনুল। এর পর তৃতীয় উইকেটে ৮৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তামিম আর মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু এলগারের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন তামিম। তিনি স্বভাববিরুদ্ধ ভঙ্গিতে ব্যাট করে ১২৯ বলে ৫৭ রান করেন।
মাত্র তিনটি বাউন্ডারি মেরেছেন তামিম, যার দুটিই দিনের শুরুতে ডেল স্টেইনের প্রথম দুই বলে। তখন মনে হচ্ছিল, মারমুখী মেজাজে খেলবেন তামিম। কিন্তু পরে সিঙ্গেল আর ডাবলের ওপর ইনিংস নির্মাণ করেছেন তিনি। মাহমুদুল্লাহ বরং তামিমের চেয়ে বেশি শট খেলেছেন। তার ৬৭ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল ১০টি। শুরুতে গ্গ্নান্স ও ফ্লিক করতে গিয়ে একটু সমস্যা হলেও পরে তা কাটিয়ে ওঠেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ভারনন ফিল্যান্ডারের দ্রুতগতির বল খেলতে ব্যর্থ হয়ে এলবিডবি্লউ হন তিনি। বাংলাদেশের স্কোর তামিম ও মাহমুদুল্লাহ জুটির কারণেই ৪ উইকেটে ১৭৯ রানে গিয়ে থামে। আজ এখান থেকেই শুরু করবেন সাকিব ও মুশফিক।
একজন অপরাজিত ১ রানে; অন্যজন ১৬ রানে ব্যাট করছিলেন। চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে বৃষ্টিও যে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে, তা লেখাই হয়নি। চা বিরতির পরপরই বৃষ্টি নামে, যার জন্য খেলা ৫৪ মিনিট বন্ধ ছিল। এর পর মাঠ প্রস্তুত করে খেলা শুরু হতে না হতেই আবার বৃষ্টি। মাত্র এক বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন সাকিব। তাতেই ১ রান করেছেন। পরে বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে উড়ে আসা মেঘ আর খেলা হতে দেয়নি। গতকাল মোট ৬৭ ওভার খেলা হয়েছে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বৃষ্টি না থামায় আম্পায়ার দিনের খেলায় সমাপ্তি ঘোষণা করতে বাধ্য হন। আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে খেলা শুরু হবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা আজও আছে।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের ইতিবাচক দিক হলো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের প্রোটিয়াস পেস আক্রমণের মোকাবেলা। ডেল স্টেইন ভালো বল করলেও উইকেট পাননি। আসলে তাকে খুব সাবধানতার সঙ্গে খেলেছে বাংলাদেশ। তাই ১৩ ওভারে ৪৬ রান দিয়েও উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি। মরকেল ১১ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান, কোনো উইকেট পাননি। কেবল ফিল্যান্ডার ১২ ওভারে ২২ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছেন। বাংলাদেশের বাকি উইকেট নিয়েছেন পার্টটাইম বোলাররা। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলসে আসা দুই দলের প্রতিনিধিই বললেন, একটু হলেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
দিনের সেরা পারফরমার মাহমুদুল্লাহ বললেন, ‘কালকের (আজ) প্রথম সেশনটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম সেশনে আমরা যত কম উইকেট হারাব, ততই আমাদের শক্তি অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারব। যদি পারি তা আমাদের জন্যই ভালো হবে। আশা করি, বড় স্কোর করতে পারব।’ তবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্কোর করাটা খুব সহজ হবে না। একে তো প্রতিপক্ষের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা, তার ওপর এমন সংকট-মুহূর্তে বাংলাদেশের টেস্ট রেকর্ড খুব নাজুক। অনেক ক্ষেত্রেই সুবিধাজনক অবস্থা থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আজও তাই হবে না তো!
আশাবাদী মাহমুদুল্লাহ অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, আমাদের শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ; টেস্ট-ওয়ানডে বা টি২০ যা-ই খেলি না কেন। তামিম-ইমরুল খুব ভালো শুরু করেছিল। ইমরুল-মুমিনুল হয়তো আজকে ঠিকমতো ক্লিক করতে পারেনি। আমি আর তামিম যখন ব্যাট করছিলাম, আমাদের পরিকল্পনা ছিল, যতক্ষণ সম্ভব ব্যাটিং করার। তাহলে আমাদের চান্সটা বেশি থাকত। আমার মনে হয়, প্রথম ইনিংসটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ, পিচটাও কিছুটা হলেও রাফ হচ্ছে। এই জিনিসটা হয়তো আমাদের স্পিনারদের জন্য পরে হেল্পফুল হবে।’
স্পিনারদের সহায়তায় সেই বাতাবরণ তৈরি করতে এখন প্রথম ইনিংসে লিড দরকার বাংলাদেশের, যা হয়তো চট্টগ্রাম টেস্টের ভাগ্য নির্ধারণের নিয়ামক হতে পারে। গতকাল আশ্চর্যজনকভাবে জেপি ডুমিনিকে ব্যবহার করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ হয়তো না করে উপায় থাকবে না। অবশ্য যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে সবকিছুই তো থেমে থাকবে। সে ক্ষেত্রে একটা তুখোড় টেস্ট লড়াই দেখা থেকে বঞ্চিত হবে চট্টগ্রাম।