
অনলাইন ডেস্ক ::
৩ মার্চ ২০১৮। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আঁখিমনি ও মিনহাজ বিন নাছির। মধুচন্দ্রিমা উদযাপন করতে ১২ মার্চ নেপালের পথে রওনা হন নবদম্পতি। কিন্তু হানিমুনের আগেই একসঙ্গে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাদের। হাত থেকে মেহেদির রঙ না শুকাতেই ঠিকানা হলো ওপারে। মিনহাজের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা হলেও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। এখানে ছিল তার দাদার বাড়ি। নেপাল থেকে ঘুরে আসার পর নববধূকে নিয়ে চট্টগ্রামে আসারও কথা ছিল মিনহাজের। চট্টগ্রামে স্বজনদের বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম।
নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ইলা, মিলা, শিলা, ভাই ইউসুফ এবং ফয়সাল- তারা একসময় চট্টগ্রাম শহরের চেনামুখ ছিলেন।
সত্তর-আশির দশকে আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবের নামকরা অ্যাথলেট ছিলেন তারা সবাই। কৃতী অ্যাথলেট ইলার ছোট ছেলে ছিলেন মিনহাজ। স্বামী না থাকায় নিজেই দায়িত্ব নিয়ে ছোট ছেলে মিনহাজকে বিয়ের পিঁড়িতে বসান মা ইলা। স্বপ্ন ছিল ছেলে ও বউকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই স্বামীর মতো বৌকে নিয়ে ছেলেও চলে গেল না ফেরার দেশে। মিনহাজের বাবার নাম ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন সারওয়ার। প্রায় চার বছর আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মিনহাজ বিন নাছিররা দুই ভাই। বড় ভাই মিরাজ যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। লেখাপড়া শেষ করে বাবার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করতেন মিনহাজ। ভাই যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী; তাই সেখানেই চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল তার। কিন্তু মায়ের ইচ্ছা ছিল বিয়ে করে ছেলেকে পাঠানোর। তাই অনেক ধুমধাম করেই ছেলেকে বিয়ে করান। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে স্ত্রীকে নিয়ে নেপালে মধুচন্দ্রিমা কাটাতে গিয়েছিলেন মিনহাজ। কিন্তু মা ইলা কি কখনও কল্পনা করতে পেরেছিলেন আনন্দভ্রমণে গিয়ে প্রিয় ছেলে ও পুত্রবধূ লাশ হয়ে ফিরবে?
সোমবার দুপুরে বিমান দুর্ঘটনা এবং ছেলে ও ছেলেবউয়ের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি ইলাকে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরে ছেলের জন্য ছটফট করতে থাকেন মা। বারবার ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে কথা বলতে চান। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার দুপুরে ছেলে ও পুত্রবধূর মৃত্যু সংবাদ জানাতে বাধ্য হয় পরিবার। এরপর থেকে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন ইলা। কোনো কিছুতেই তার কান্না থামছে না।
ইলার বড় বোন মিলা ও বড় ভাই ইউসুফের সহপাঠী ছিলেন জিয়াউল হাসান টিটু। মঙ্গলবার মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘খুবই মর্মান্তিক। ঘটনার পর থেকেই তার মা ছেলে ও পুত্রবধূর সংবাদ পেতে ছটফট করতে থাকেন। প্রথমে তাকে মৃত্যুর সংবাদটি দেওয়া হয়নি।
আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ দুলাল বলেন, ‘এমন মৃত্যু কখনও মেনে নেওয়া যায় না। ক্লাবের সদস্যরা নবদম্পতির এমন মৃত্যুতে মর্মাহত।’