
রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রফেসর ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি বলেন, ‘রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই এখন বলব না। আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফেরার আহ্বানও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে রেজাউল করিম সিদ্দিকীর নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষক-ছাত্র-সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মো.শহীদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শাহ্ আজম শান্তনু’র পরিচালনায় চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘ রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। এ হত্যাকা- প্রথম নয়; এর আগে তিন জন শিক্ষককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা শিক্ষকের হত্যা কখনো মেনে নিতে পারি না। শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে কিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করবে। আমরা চাই না আর কোন শিক্ষকের প্রাণ ঝরুক। আমরা এর বিচার চাই। শাস্তি চাই।’ শিক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষতে যেন আর এ ধরনে কোন ঘটনা না ঘটে। এ জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।’
শাহরিয়ার আলম এমপি বলেন, ‘এ বিশ^বিদ্যাল অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী। বিশ^বিদ্যালয়ের মেইন ফটকে জোহা স্যারকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে যে হত্যাকান্ড হয়েছে তার বিচার অন্য ধারায় প্রভাবিত করা হয়েছে। আমাদের ভীত হলে চলবে না। ভীত হলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব না। আমারদের জীবনের উপর হুমকি আছে। একজন শিক্ষককে যখন সুনির্দিষ্ট করে হুমকি দেওয়া হয় তখন হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয় থেকে আলাদা। তাই এ বিশ^বিদ্যালয়কে একটু আলাদাভাবে দেখতে হবে।’
তদন্তের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক বলেন, ‘রেজাউল করিম এর হত্যার তদন্তের উন্নতি হয়েছে। অতি শ্রীঘ্রই আমরা হত্যার বিচার করতে সক্ষম হব। আমরা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিচ্ছি না। গোটা জাতিকে এক হতে হবে। প্রত্যেকে সজাগ থাকতে হবে। পুলিশের উপর আপনাদের আস্থা থাকতে হবে। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা আমরা পালন করে যাচ্ছি। পুলিশের এ ক্ষেত্রে কোন গাফলতি নেই বলে জানান তিনি।’
ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘এই বিশ^বিদ্যালয়ে যে সন্ত্রাস চলছে তা অন্যভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। দীর্ঘ দিন থেকে এ চক্রান্ত চলছে। চক্রান্তকারীরা এ বিশ^বিদ্যালয়কে ধ্বংস করার জন্য শুধু ভিতরের শক্তি নয়, বাইরের শক্তিও যুক্ত আছে। এসব চক্রান্তকারীদের মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।’
প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এক যুগে চার শিক্ষককে হত্যা কার হয়েছে। তাদের বিচারের শেষ দেখতে পাইনি। আমার শেষ বিচার দেখতে চাই। কোন জ্ঞাপ বা ফাঁকের কারণে বিচার যেন থেমে না যায়। এভাবে যদি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস চলতে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা আর ক্যাস্পাসে আসবে না। শিক্ষাব্যবস্থা থমকে দাঁড়িয়ে যাবে।’
সমাবেশে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, মহাসচিব প্রফেসর মাকসুদ কামাল, ইংরেজী বিভাগের ড. এ এফ এম মাসউদ আখতার, প্রয়াত শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর কন্যা রিজওয়ানা হাসিন শতভি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এমপি, সংরক্ষিত মহিলা এমপি আখতার জাহান, রাবি’র সাবেক ভিসি প্রফেসর এম সাইদুর রহমান খাঁন, প্রফেসর আব্দুল খালেক, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহিত শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।