
আব্দুর রহমান মিন্টু,সাতক্ষীরা ॥
সাতক্ষীরা জেলা শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহীত এক সময়ের প্রমত্তা প্রাণসায়ের খাল আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। খালের দুই মুখে অপরিকল্পিত স্লুইজ গেট নির্মান, প্রাণসায়রের দু’ তীর জবরদখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতি স্থাপন গড়ে তোলা, খালের মধ্যে বর্জ্য,ময়লা-আবর্জনা ফেলাসহ নানা কারনে খালটি জেলা শহরের মানুষের কাছে অভিশাপে পরিনত হয়েছে। খালের পঁচা দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দুষিত হয়ে উঠেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারনে এলাকায় ছড়াচ্ছে নানা রোগজীবানু।
১৮৬৫ সালে অবিভক্ত বাংলার সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পি এন হাইস্কুল এ- কলেজ ও ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার্থে প্রাণসায়ের খাল খনন করেন। সাতক্ষীরার খেজুরডাঙ্গী থেকে সাতক্ষীরা শহর হয়ে এল্লারচর পর্যন্ত এ খালের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। প্রথমাবস্থায় এ খালের চওড়া ছিল ২০০ ফুটের বেশি। বড় বড় ব্যবসায়িক নৌকা ঢুকত এ খালে। ফলে সাতক্ষীরা ক্রমশ সমৃদ্ধশালী শহরে পরিণত হয়।
১৯৮৩ সালে এ মহকুমা শহর থেকে জেলা শহরে রুপান্তরিত হয়। ১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় জনগনের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে বন্যা প্রতিহত করার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের দু’ধারে স্লইজ গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে তারা ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য করে। খালের দুই প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইজ গেট নির্মান করে খালের স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়ার কারনে বর্তমানে খালটি বদ্ধ খালে পরিনত হয়েছে।
জলবায়ু ট্রাষ্ট ফা-ের আওতায় ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ১০ কিলোমিটার খাল সংস্কারের টে-ার পেয়ে ঢাকার মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্স ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে প্রানসায়ের খাল খনন শুরু করে। কিন্তু তারা নামমাত্র খনন করে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকাই লোপাট করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। খাল খননের নামে খালের দু’ধারের শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে খালটি বজ্য,ময়লা-আবর্জনা ফেরার স্থানে পরিনত হয়েছে। খালের দু’ধারে অবৈধ দখলদাররা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্টান ,হোটেল, বাস ভবন তৈরী করেছে। খালের পঁচা দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দুষিত হয়ে উঠেছে। খালের দু’ধারে বসবাসের অবস্থা নেই।পথচারীরা খালের ধার দিযে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারেনা পঁচা দুগ্যন্ধে।
প্রাণ সায়ের খালের সিংহভাগ অংশই সাতক্ষীরা পৌরসভার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হলেও পৌর কতৃপক্ষের কোন নজরদারি নেই। নানা অজুহাত দেখিয়ে পৌরসভার মেয়র নিজের দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বার বার।
এই করুন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে সাতক্ষীরা প্রানসায়ের খালের পুন:যৈবন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি সাতক্ষীরা শহর বাসীর। অবিলম্বে খালের দুই ধার পরিকল্পিত ভাবে সংরক্ষনের উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এই প্রত্যাশা সাধারন মানুষের।