
অনলাইন ডেস্ক ::
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগের সাথে বলেছেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই যে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা দাঙ্গা-কবলিত এলাকায় যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় ট্রেনিং, অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াই। এমনকি অধিকাংশ সময়ই কমান্ডিং অফিসারের সাথেও তাদের সমন্বয় থাকে না। ভাষা এবং সংস্কৃতিগত ব্যবধান, ট্রেনিংয়ে বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনার অভাবও রয়েছে বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালনরতদের মধ্যে। অথচ তাদেরকে আমরা পাঠাচ্ছি দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের পর সামাজিক অস্থিরতা দূর করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্তদের টার্গেট হচ্ছেন, এবং আমরা তাদেরকে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি।’
গতকাল বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উন্নয়নে সম্মিলিত পদক্ষেপ” শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ৫৯ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৩৪ অর্থাৎ দায়িত্ব পালনকালে নিহত হবার ঘটনা বেড়েছে।
১৯৪৮ সাল থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত মোট ৩৭০৯ শান্তি রক্ষী মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৩০ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিচ্ছে এবং সর্বাধিক সংখ্যক সৈন্য সরবরাহ করছে বিভিন্ন মিশনে। বাংলাদেশের সৈন্যদের দায়িত্ব পালনের প্রশংসা রয়েছে সর্বত্র।
নিরাপত্তা পরিষদের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন নেদারল্যান্ডস’র প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুথ। উল্লেখ্য, চলতি মার্চে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে নেদারল্যান্ডস এবং তারাই এই এজেন্ডা নির্ধারণ করে।
এ সভায় শান্তিরক্ষীদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। মহাসচিব উল্লেখ করেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রমকে সেনাবাহিনীর অভিযান মনে করার অবকাশ নেই, কিংবা জঙ্গিবাদ নির্মূলের প্রক্রিয়াও নয়, অথবা অমানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিবেচনার প্রয়োজন হয় না। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের রাজনৈতিক-সামাজিক মতদ্বৈততা থেকে এবং তার অবসান ঘটাতেও দরকার বাস্তবতার আলোকে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার’। স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।
সে আলোকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এই আলোচনায় অংশ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত শান্তিরক্ষীদের ব্যাপক হতাহতের প্রেক্ষাপটে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশন আনার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “গত বছর কর্তব্যরত শান্তিরক্ষীদের নিহত হওয়ার ঘটনা ছিল রেকর্ড। এই অবস্থা পাল্টাতে অবশ্যই আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে শান্তি রক্ষার প্রতিশ্রুতিসমূহ আরও সুসংহত করে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আমরা কাজ শুরু করতে পারি-যা হবে পারস্পরিকভাবে শক্তিশালী। আর এতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আলাদা আলাদাভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের স্বার্থে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশন গ্রহণসহ যে কোনো গঠনমূলক মতামতকে সমর্থন জানাতে সদা প্রস্তুত রয়েছে”।
শান্তিরক্ষায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য প্রদান একটি অপরিহার্য বিষয়। যখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা অরক্ষিত হয়ে যায় এবং শান্তিরক্ষীগণও অসম ঝুঁকির মধ্যে পড়েন”।
তিনি তাঁর বক্তৃতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের রিভিউ ও পরিকল্পনায় বস্তুনিষ্ট রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রয়োগের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কথা উল্লেখ করেন।